শরতের এক সুন্দর সকাল। হাসান সাহেবের পরিবারের সকল সদস্যের চোখে খুশির আলো। কারণটি তাদের নতুন বাড়ি। হাসান সাহেব একজন সরকারি চাকরিজীবী। পরিবারের সদস্য পাঁচ জন। হাসান সাহেব, তার স্ত্রী শায়েলা, বড় ছেলে মাহমুদ, মেয়ে নাসরিন এবং মাহীর, যার আদুরে নাম ভুলু। ঢাকা শহরের ব্যস্ত জীবনে থেকে ক্লান্ত সবাই একদিন একটি সুসংবাদ পেল।হা সান সাহেব বদলি হলেন নেত্রকোনায়। থাকা হবে জমিদার বাড়িতে। শুনেতো শায়েলার মুখে বিস্ময়ের চিহ্ন। সকলে খুশি। কিন্তু একটি সমস্যা রয়ে গেল। মাহমুদকে নিয়ে ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের ছাত্র। কিভাবেই বা সেখানে যাবে। শেষে সিদ্ধান্ত হল মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকবে। বাকিরা বরং যাবে নেত্রকোনায়। সেই হিসেবেই প্রস্তুতি। মোটামুটি একমাস লাগল সব গুছাতে। অবশেষে যাত্রা শুর হল নেত্রকোনার দিকে। বিশাল জমিদার বাড়ির জমিদার মশাই মুক্তিযুদ্ধের সময়ই ভারতে আশ্রয় নিতে যান।কিন্তু সেখানে পৌছালেন কিনা বা পথিমধ্যে পাকিস্তানিদের হাতে তার মৃত্যু হল কিনা সেটি একটি রহস্যই রয়ে গেছে।সেই থেকেই তার বাড়িটি সরকারি সম্পদ।সেই সুবাদেই হাসান সাহেবের নতুন আবাসস্থল।বাড়িতে পা দিয়েই নাসরিনেরতো আক্কেলগুড়ুম।এত বড় উঠান, তিনটি বড় পুকুর, নিজস্ব বড় একটি লাইব্রেরি, নাসরিন তো বেজায় খুশি। বাবাকে বলছে বাবা আমারতো মনে হচ্ছে আমি এ জমিদার বাড়ির রাজকন্যা। ঢাকা থাকলে তো এ বাড়ির কিছুই দেখতে পারতাম না। হাসান সাহেব বলেন, সত্যিই মা, মাঝে মাঝে মনে হত ভুলুটা বুঝি সারাদিন বাসায় বসে বসে কয়েদির মত হচ্ছে।কিন্তু আমরা আমাদের ছেলেবেলায় কত কিই না করেছি। তাই যখন নেত্রকোনার প্রস্তাবটি পেলাম দ্বিধা না করে রাজি হয়ে গেলাম। ঘরের থেকে শায়লার শব্দ শোনা গেল,”এখন বাপ মেয়ের কথা শেষ কর। এখানে এত কাজ, আমাকে সাহায্য কে করবে শুনি?”
বাড়িটি বিশাল। উঠান পেরুতেই একটি বড় বসার ঘর, বসার ঘরের পর একটি বড় খাবারের ঘর, যেখানে রয়েছে একটি পুরনো আমলের বড় একটি খাবার টেবিল ।দেখলে মনে হয় একসাথে ২৫ জন সহজেই খেতে পারবে। রান্না ঘর এবং আরেকটি ঘর রয়েছে নিচে। বাকি সব ঘর দোতলায়। মোট ঘরের সংখ্যা ১০। রয়েছে ঝুল বারান্দা। শায়েলার মোটামুটি পছন্দসই হল বাড়িটা। তাই পুরোদমে শুরু করলেন ঘর গোছানোর কাজ।
সাত বছরের ছোট্ট ছেলে ভুলু। এরই মধ্যে নেত্রকোনার জীবন তার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। বাড়ির কাছারির ঘরের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো তার নিত্য দিনের কাজ হয়ে উঠেছে। পুকুর, ধানক্ষেত, আলপথ, উঠান সবই তার অচেনা। তাই যখনই সময় পায় বাড়ির বাইরে যায়। প্রথমে তা সবারই চিন্তার কারণ হয়ে দাড়ায়। কিন্তু সে যখন নিজেই বাড়িতে ফিরতে পারে তখন এ চিন্তা চলে যায়।
রাতের খাবার সেদিন ভাল ভাবেই সম্পন্ন হয়, ভাতের সাথে রুই মাছের ঝোল, ডাল এবং ডিম ভাজি। ভুলুর মন খারাপ, সে আশা করেছিল বিরিয়ানির, কিন্তু এত কাজের পর যখন রান্নার পালা এল তখন তার মার সমস্যার কথা ভুলুর মাথায় আসেনি।খাবারের পর কিছুক্ষন গল্প করার পর সকলে ঘুমোতে গেল।
পরদিন শায়েলা মেয়েকে নিয়ে বের হলেন এলাকা পরিদর্শনে। প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয়ও হল ভালোই।বাড়িতে ফিরে শায়েলা গেলেন রান্না বসাতে এবং নাসরিন গেল পুকুর ঘাটে। সে কিছুক্ষন ভাবল তার নতুন স্কুলের কথা এবং নতুন বন্ধুদের কথা।রাতে খাবারের পর সকলে ঘুমোতে গেল। হঠাৎ মাঝরাতে নাসরিনের কক্ষের দরজায় টোকার শব্দ শোনা গেল, সে দরজা খুলে দেখে ভুলু ভয়ে কাঁপছে।সে বলল “বুবু, ভূত ভূত।” ভূত? নাসরিন অবাক হয়ে গেল।হাসান সাহেব সেদিন বাড়িতে ছিলেন না।অফিসের কাজে ঢাকায় ছিলেন।শায়েলা নাসরিনকে বলল “মা, ছাদ থেকে অনেক জোরে লাফানোর শব্দ আসছে।”। নাসরিন তার মার কক্ষে গিয়ে দেখল কথাটি ঠিক।শায়েলা বলল” এত রাতে আর ছাদে যেয়ে কাজ নেই। নাসরিন, আজকে তোমার সাথে শুব।” সেদিন তারা নাসরিনের ঘরেই ঘুমাল।পরদিন হাসান সাহেব ফিরলে তাকে সব ঘটনা বলা হলো।তিনি বললেন” আরে, কোন চোর হবে”। শায়েলা বললেন চোর হলে কিছু চুরি না করেই চলে গেল? হাসান সাহেব হেসে বললেন চোর চুরি করলেই বুঝি তুমি খুশি হতে? আমারতো মনে হয় চোর তোমার চেহারা দেখেই ভয়ে ছাদে লাফাতে আরম্ভ করেছিল।একথা শুনে বাড়ির সবাই হাসতে লাগল।কিন্তু শায়েলা এই যুক্তি বিশ্বাস করেনি। সেদিন রাতেও একই শব্দ শোনা গেল।রাত তিনটায় হঠাৎ এ শব্দ।হাসান সাহেব চেঁচিয়ে উঠলেন। শায়েলা বলল” ঐ যে তোমার চোর বন্ধু, তোমাকে নৃত্য দেখাতে এসেছে “। না,বিষয়টি দেখতে হবে, বলেই হাসান সাহেব উঠলেন।অমাবস্যার রাত,লাঠি ও টর্চ নিয়ে ছাদে গেলেন হাসান সাহেব ও শায়েলা।শব্দটা এখনো আসছে।কিন্তু একি ,ছাদে তো কেউ নেই।ছাদের দরজা খুলতেই শব্দটা বন্ধ হয়ে গেল।ছাদের সবখানে দেখা হল ,কিন্তু কেউ নেই।শায়েলা বলল যদি চোর হতো তাহলে অবশ্যই আমরা তাকে দেখতে পেতাম।”কথাটি ঠিকই বলেছ” হাসান সাহেব বললেন।পরদিন সকালে আবার এ প্রসঙ্গটি উঠলে হসান সাহেব বললেন,আজ রাতে দেখব শব্দটা আসে কোথা থেকে।রাতে আবার সেই শব্দ, কিন্তু কিভাবে হচ্ছে এ শব্দ বোঝা মুশকিল।সকালে নাসরিন ও ভুলু তাদের নতুন স্কুলে যেতে আরম্ভ করল।শায়েলা রান্না শেষে বসায় একা।মনে করল প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলবে।সে অনুযায়ী শায়েলা গেল প্রতিবেশীর বাসায়। প্রসঙ্গক্রমে রাতের কথাটি আসলে প্রতিবেশী জাহানারা বলেন”কি বলেন ভাবি!আপনার আসার এক সপ্তাহ আগে যে পরিবার এ বাড়ি ছেড়ে যায় তারাও একই কথা বলল।যুদ্ধের পর সেই প্রথম এই বাড়িটি তাদের দেয়া হয়েছিল।তারাও একই শব্দ পেত।তাই ভয়ে এ বাড়িতে আসার পাঁচ দিনের মাথায়ই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।তার এক সপ্তাহ পর আসেন আপনারা।আপনিও একই শব্দ শুনেন?” হ্যাঁ,আচ্ছা এ শব্দ কেন হয় তা কি আপনি জানেন?”লোকে বলে এ শব্দ করে জমিদারের বোনের আত্মা।শায়েলা ভয়ে ভয়ে বলল” কী! মানে?” জাহানারা বলেন প্রচলিত আছে যে জমিদারের বোন নাচ শিখতে চাইত, কিন্তু জমিদার তাতে রাজি না হওয়াতে এরই জের ধরে সে ঐ বড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে।” কী বলেন,শায়েলার চোখ আরো বড় হয়ে গেল।এমন সময় মা,মা শব্দ শোনা গেলে শায়েলা বুঝতে পারলেন নাসরিন স্কুল থেকে ফিরে এসেছে।শায়েলা বাড়িতে ফিরে গেলেন।
হাসান সাহেবকে এ ঘটনা বললে তিনি বলেন যে, আজ রাতে ভেবে দেখতে হবে।রাতে আবার সে শব্দ শোনা গেল ঢং ঢং।হাসান সাহেব হেসে শায়েলাকে বললেন জমিদার সাহেবের বোনকি নূপুর পায়ে নাচেন,নাকি ঘন্টা বাজিয়ে নাচেন? শায়েলা বলেন, তোমার তো সব কিছুই ঠাট্টা মনে হয়।পরদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে শায়েলা এক নতুন দৃশ্যের সম্মুখীন হলেন।প্রতিবেশী সকলেই তার দিকে আজব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,মনে হয় যেন ভিনগ্রহের এক প্রাণীকে দেখছে।এমন সময় কাজের মানুষ রানুর মা এসে জিজ্ঞেস করল” মা তুমি ঠিক আছো তো?” শায়েলা চমকে বলেন ” ঠিক আছ মানে?” রানুর মা জবাবে বলল,জাহানারা সবাইকে বলেছে যে শায়েলাকে ভূতে আছর করেছে। তাহলে জমিদার বাড়ির আত্মার বিষয়টি গুজব নয়।শায়েলা বললেন,মনে হয় আপনি ঠিকই বলেছেন, কিন্তু আমার সাথে তো কিছুই হয়নি।শুধু রাতে ছাদে আজব শব্দ শুনতে পাই।” রানুর মার বয়েস অনেক।বুড়ি ভুরু কুঁচকে বলল “মা,আমার চেনাজানার মধ্যে একজন হুজুর আছেন।তোমার বাড়িতে মিলাদ পড়িয়ে নিলে ভাল হয়।”শায়েলা রানুর মার সাথে সম্মতি জানিয়ে বলল”ঠিক আছে”। সেদিন রাতে শায়েলা হাসান সাহেবকে মিলাদের কথা বললে তিনি বললেন” তা তোমার যদি মনে হয় তবে মিলাদ পড়ালে খারাপ হয়না। সামনের সপ্তাহে ছুটি আছে,তখন একদিন মিলাদ পড়িয়ে ফেলব।এদিকে দূর্গা পূজার ছুটিতে মাহমুদের বাড়িতে আসার দিনও এসে গেল।সে ভাবল না বলে হঠাৎ বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে চমকে দিবে।কিন্তু দীর্ঘযাত্রার পর বাড়ির উঠানে পা দিয়ে সে নিজেই চমকে গেল।এটাই তার বাড়ি, নাকি ভুলে অন্য কোথাও চলে এসেছে। বাড়িতে সবাই ব্যাস্ত মিলাদের প্রস্তুতিতে।মাহমুদকে বাড়িতে ঢুকতে প্রথম দেখল নাসরিন।তার হাতে গোলাপজলের চারটি বোতল ও ছয় প্যাকেট আগরবাতি। নাসরিন বলল,” আরে ভাইয়া,কাউকে না বলে চলে এসেছ? বুঝেছি,সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলে?
“হ্যাঁ, কিন্তু এখনত নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যাচ্ছি। বাড়ির সামনে এত চেয়ার।তুই এসব কি নিয়ে ঘুরছিস? জ্যোতিষি হবার ইচ্ছে হল নাকি?
নাসরিন বলল ” এখন তো কিছুই দেখনি,ভালো হয়েছে এসে পড়েছ।এখন দেখবে কি ভাবে জমিদার বাড়ির ভূতকে জব্দ করা হবে।
” ভূত? মাহমুদ বিস্মিত হয়ে বলল।সকাল সকাল পাগলের রোগে ধরল নাকি?
মাহমুদ বাড়িতে ঢুকতেই শায়েলার চোখে আনন্দের ঝিলিক দেখা গেল।” বাবা, তুই এসেছিস, ভালোই হলো, জানিস আমাদের বাড়িতে ভূতের উপদ্রব দেখা দিয়েছে ।”
মাহমুদ বলল ” কী এসব ভূতটুতের কথা?
হাসান সাহেব বললেন মাঝ রাতে ছাদে আজব শব্দ শোনা যায়।তোমার মার ধারণা এটি ভূতের কান্ড ”
মাহমুদ এবার হাসত হাসতে মরার অবস্থা।
“আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। তোমরা এখন আমাকে বলছ ভূতে বিশ্বাস করতে?
শায়েলা বলল আজ রাতেই দেখা যাবে।সন্ধ্যার মধ্যে হুজুর এসে হাজির।মাহমুদের মেজাজ ভাল নেই।এদিকে আকাশের অবস্থাও বিশেষ ভালনা।সন্ধ্যা থেকেই ঝড়ের আশংকা, আকাশ কালো হয়ে আছে। সেই সাথে অমাবস্যার রাত।সিদ্ধান্ত হল রাতে শব্দ যখন শুরু হবে তখন সিড়িঘরে গিয়ে সূরা পড়তে পড়তে ছাদের দিকে উঠতে হবে এবং তারপর ঘরে ফিরে মিলাদের কাজ শুরু করতে হবে।সময় উপস্থিত হল,কিন্তু প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া শুরু হল।দেখা গেল বৃষ্টি হচ্ছে না,কিন্তু প্রচন্ড শব্দ হচ্ছে। সবাই সিড়িঘরের দিকে রওয়ানা হল, সবার আগে হুজুর, তারপর আরও দুইহাত পেছনে শায়েলা এবং পরিবারের বাকি সবাই।মাহমুদকে ইচ্ছে করেই সবার পিছনে রাখা হলো কারণ সে বিকেলে এ বিষয়ে ঝগড়া করেছিল।মাহমুদ এবং ভুলু বাদে বাকি সবাই সূরা পড়তে মগ্ন। এদিকে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না,ছাদের দরজা খোলার সাহসও কারো হচ্ছেনা
হুজুর নিজেও ভয়ে তটস্থ। ছাদের পাশে একটা জানালা ছিল।সেখান দিয়ে উঁকি দিতেই হুজুরের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল।নিকষ কালো আঁধারের মাঝে চারটে হলদে সবুজ বিন্দু জ্বল জ্বল করছে।সাথে ঢং ঢং শব্দ। হুজুর নিজের টুপি ফেলে লুংগি তুলে সবার উপর দিয়ে দিলেন এক দৌড়।সবাই তার এই কান্ডে অবাক।এদিকে মাহমুদের হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।শায়েলা জোর করে সবাইকে নিয়ে ঘরে গেল।কোনমতে রাতটা কাটল।
সকালে হুজুরকে পাওয়া গেল।উনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন” দুঃখিত,আমি আপনাদেরকে সাহায্য করতে পারবনা।উনি তার টুপি ফেরত নিয়ে চলে গেলেন।
নাশতার টেবিলে মাহমুদ হঠাৎ বলে উঠল” আমি এ রহস্যের সমাধান করব”।
শায়েলা ভুরু কুঁচকে বলল “স্বয়ং হুজুর এ কাজ করতে পারেনি,তুই কি করে করবি? আমাদের এ জায়গা থেকে চলে যাওয়া উচিৎ।
বিকালের দিকে মাহমুদ এলাকাটা ঘুরে এসে বলল” মা, এ জায়গাটা সুন্দর বটে” আমরা এখানেই থাকব।আজকে রাতেই এ রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।”
নাসরিন বলল ” তা কিভাবে?” হুজুর আমাদেরকে কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, এমনকি মোবাইলও নিতে মানা করেছিল।
মাহমুদ বলল আমি শুধু একটা টর্চ চাই।শায়েলা বলল তুই তো আমার না শুনবিনা।যা ইচ্ছা তাই কর।তবে এ পরীক্ষা ব্যর্থ হলে আমরা এ জায়গা ছেড়ে চলে যাব,ব্যস।”
মাহমুদ বলল ঠিক আছে।
রাত ঘনিয়ে এল।শান্ত বাতাস, কিন্তু অমাবস্যার কারণে ঘুটঘুটে অন্ধকার।রাত দুটোর দিকে শব্দ শুরু হল।মাহমুদ সবাইকে নিয়ে দল বেধে উপরে উঠল।অন্ধকার রাত, হুজুরের বর্ণনা অনুসারে হলদে সবুজ বিন্দু নেই,কিন্তু শব্দ আছে। মাহমুদ আস্তে আস্তে নিঃশব্দে ছাদের দরজা খুলল।সবাই ছাদে এলো কিন্তু কিছুই দেখা গেলনা।মাহমুদ সবাইকে নিঃশব্দে থাকতে বলল। তারা ছাদের একপাশ আবিষ্কার করতে ভুলে গিয়েছিল।জমিদার বাড়ির পেছনে বনের মত অনেক গাছ ছিল।তাদের পরিবারের কেউত দুরের কথা প্রতিবেশীদের কেউও কখনো সেখানে যায়নি।কিন্তু মাহমুদ আজকে সারাদিন বাড়ির চারপাশে ঘুরছে। তাই সে দেখেছিল নিচ থেকে সিঁড়িঘরের কাঠামোর পেছনেও কিছু জায়গা ছিল ছাদে।মায়ের নিষেধের কারণে সে দিনের বেলায় আর ছাদে যায়নি।তারা নিঃশব্দে সেই অংশে গেল।শব্দ আরও তীব্র হচ্ছে। মাহমুদ নাসরিনকে ইশারা করল টর্চটা দিতে।সবাই মাহমুদের পেছনে দাড়াল।টর্চের আলো ফেলতেই তারা এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেল।একটি পরিত্যক্ত টিনের টুকরা সিঁড়িঘরের কাঠামোর সাথে হেলান দেয়া।তার উপর লাফাচ্ছে তিনটি কুচকুচে কাল বিড়ালছানা। তাদের চোখ হলদে সবুজ।মাহমুদ বলল “মা এস, দেখে যাও জমিদার মশায়ের নর্তকী বোনদের।’ মাহমুদ আবার হাসতে হাসতে পরে যাচ্ছে।
নাসরিন বলল” ও আচ্ছা তাই, তার মানে হুজুর যা দেখেছিল তা হলো এদের মধ্যে দুটো বিড়ালছানার চোখ, আর অন্যটি এ টিনের উপর লাফাচ্ছিল।”
মাহমুদ উত্তর দিল ঠিক তাই।
কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর বিড়ালছানাদের মাকেও দেখা গেল।সে তার ছানাদের খাবার নিয়ে হাজির।কিন্তু শায়েলার প্রশ্ন হল,” তাহলে দিনের বেলা শব্দ হতোনা কেন?”
মাহমুদ বলল,এজন্য কালকে পরযন্ত অপেক্ষা করতে হবে।পরদিন রাতে মাহমুদ সবাইকে বলল,” আজকে সারাদিন বিড়ালগুলো পর্যবেক্ষন করে দেখেছি যে, তাদের দুটো আস্তানা, একটি ছাদে, অপরটি পেছনে বনে।দিনের বেলা তারা থাকে মায়ের পর্যবেক্ষনে বনে।সারাদিন খেলে,রাতে তারা এবাড়ির ছাদে ঘুমিয়ে গেলে মা বিড়াল যায় খাবার সংগ্রহে, সেই সময়টা আমাদের ঘুমের সময়। মা চলে গেলে তারা ঘুম থেকে উঠে নিজ স্বাধীনতায় টিনের অংশটিতে খেলে।যা তোমাদের জমিদারের বোনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আবার মা এলে তাদের খেলার সময় শেষ, তাই শব্দও শেষ। আরেকটি বিষয় হল টিনের চালের অংশ।যার উত্তরটি দিয়েছে মিস্ত্রী। তোমরা আসার আগে কাছারির ঘরটি মেরামত করা হয়।কাজ শেষে এ পুরনো টিনটি তারা ছাদেই রেখে চলে যায়।এ হল এ রহস্যের সমাধান।”
সমাধান শুনে পুরো বাড়ি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।এভাবেই জমিদার বাড়ির ভূতের রহস্য মিটল এবং এটি এলাকাবাসীর কাছেও হাস্যরসের উৎস হিসেবে রয়ে গেল।
এস,এস,সি উত্তীর্ণ
খিলগাঁও গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |