clock ,

ভারতের অল্পবয়সী নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে

ভারতের অল্পবয়সী নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে

ভারতের অল্পবয়সী নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত, ৩০ বছর বয়সের কম নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের সংখ্যা বাড়ছে, যা চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে।

দিল্লির বাসিন্দা নীদা সরফরাজের প্রায় দশ বছর আগে তার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে তার স্তনে একটি অস্বাভাবিক বল অনুভব করেন, যা প্রথমে তাকে উদ্বিগ্ন করেনি। তবে পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে বেশ কিছু পরীক্ষা করানোর পর তার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসক তাকে দ্রুত সার্জারির পরামর্শ দেন, কারণ ক্যান্সার অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে তার স্তনের একটি বড় অংশ অপসারণ করতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একজন ভুক্তভোগী বলেন, স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ার সময় তাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্তনের একাংশ অপসারণ করতে হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে আগে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সাধারণত ৪০-৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যেত। তবে, বর্তমানে ৩০ বছরের কম বয়সী নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুম্বাইয়ের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সুমিত শাহ এই বিষয়ে বলেন, "আগে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীরা ছিলেন, কিন্তু এখন অনেকেই ৪০ বছরের কম বয়সী।"

কলকাতার চিকিৎসক ডা. ঋতুপর্ণা চতুর্বেদী বলছেন, "অল্পবয়সী নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার বৃদ্ধি পাওয়া উদ্বেগজনক। আমার অভিজ্ঞতায়, সবচেয়ে কম বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ছিল ১৭ বছর বয়সী।"

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি ২০ জন নারীর মধ্যে অন্তত একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর নতুন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ লাখেরও বেশি হতে পারে।

ভারতীয় নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার সবচেয়ে বেশি, এবং তা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের জাতীয় ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রামের (NCRP) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারতে স্তন ক্যান্সারের লাখের বেশি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল, এবং ২০২৩ সালে এই সংখ্যা প্রায় ১০% বৃদ্ধি পেয়ে . লাখে পৌঁছেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অল্পবয়সী নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। ডা. অমিত কান্তি সরকার, ক্যান্সার গবেষক এবং 'অনকোলিঙ্ক ইন্ডিয়া' এর প্রতিষ্ঠাতা, বলেন, "খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে ওবেসিটি, ধূমপান, পরিবেশ দূষণএইসব কারণ এই প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।" এছাড়া, জীবনযাত্রার পরিবর্তনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে উঠে এসেছে।

ডা. রোকেয়া আহমেদ মীর এবং ডা. সুমিতা প্রভাকর উভয়েই জীবনযাত্রার অভ্যাসের পরিবর্তন, যেমন জাঙ্কফুড খাওয়া, শারীরিক কসরতের অভাব, ধূমপান এবং অন্যান্য বিষয়ের কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন।

এটি সত্য যে, ভারতীয় নারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব একটি বড় সমস্যা। অনেক সময়, অল্পবয়সী নারীরা ক্যান্সারের লক্ষণ গোপন করেন বা বিষয়টিকে ছোট করে দেখেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৪০ বছর বয়সের উপরে মহিলাদের জন্য নিয়মিত স্ক্রীনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কম বয়সীদের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর কাজ এখনো খুব বেশি হয়নি।

ডা. গৌতম মুখার্জী বলেন, "কম বয়সী নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং এটি দ্রুত শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"

ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শনাক্তকরণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত সেলফ-এগজামিনেশন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে স্তন ক্যান্সারের মোকাবিলা সহজ হতে পারে। ডা. চতুর্বেদী বলেন, "যদি স্তনে কোনও অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা গিঁট দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।"

সাধারণভাবে, ক্যান্সারের বিভিন্ন লক্ষণ যেমন স্তন বা বগলে ব্যথাহীন পিণ্ড, স্তনের আকারের পরিবর্তন, স্তনবৃন্ত থেকে নিঃসরণ, ইত্যাদি লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করা নীদা সরফরাজ বলছেন, "ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করা মানে হেরে যাওয়া নয়, একমাত্র পথ হলো লড়াই।" অর্থাৎ, শক্ত মনোবল সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য