আল কায়েদা সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন সন্দেহভাজন বাংলাদেশি ধর্ম প্রচারককে নিয়ে এসে অভিবাসী কর্মীদের ডরমটেরিতে ইভেন্টের আয়োজন করায় এক সিঙ্গাপুরিয় নাগরিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত ২৭ মার্চ আবদুস সাত্তার (৫১) এর উপরে ওয়ার্ক পাস ছাড়া ধর্মীয় প্রচারককে আনা এবং পুলিশের অনুমোদন ছাড়া জনসমাগম এবং নিবন্ধন ছাড়া জনবিনোদনের আয়োজন করার চার্জ আরোপ করা হয়।
গত ২৭ মার্চ সিঙ্গাপুর জনশক্তি মন্ত্রণালয় (MOM)এবং সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স ((SPF) এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, সাত্তার তুয়াজ সাউথ এভিনিউ এর নিকটবর্তী টেক পার্ক ক্রিসেন্ট এর লানটানা লজ এ একটি ইভেন্ট এর আয়োজন করে গত বছরের ৯ আগস্ট। সে সময়ে সাত্তার ডরমেটরি অপারেটর SBM Electrical & Automation এর ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার দিন ডরমেটরির বাসিন্দা নয় এমন ব্যক্তিদের প্রবেশ এবং বের হওয়ার রেকর্ড রাখার ব্যর্থতার জন্য SBM Electrical & Automation এর উপরও চার্জ আরোপ করা হয়েছে। আদালতের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৪ এপ্রিল।
SPF এবং MOM যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, সাত্তার সচেতনভাবেই বাংলাদেশি ধর্ম প্রচারক মোঃ আমীর হামজা এবং মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহকে ধর্মীয় ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমীর হামজাকে দিয়ে ধর্মীয় বক্তব্য দেওয়ানো এবং তার ভ্রমণ সহ যাবতীয় বিষয়ে সহযোগিতার জন্য প্রসিকিউটর সাত্তারকে দোষী সাব্যস্ত করে। আমীর উপস্থিত অভিবাসী শ্রমিকদের ধর্মীয় উপদেশ দিয়েছিলেন, নেয়ামতউল্লাহ জনতার সামনে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। SBM -এর বিষয়টি হলো তারা প্রবেশ ও বের হওয়ার সঠিক রেকর্ড সংরক্ষণ না করে ডরমিটরির বাসিন্দা নয় এমন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি শ্রমিককে, ডরমিটরি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে এবং অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করতে অনুমতি দিয়েছিল।
ইভেন্ট শেষ হতেই আমীর সিঙ্গাপুর ত্যাগ করেন। পুলিশ গত বছরের ১২ আগস্ট রিপোর্ট পায় যে তিনি বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের একটি গ্রুপের কাছে ধর্মীয় উপদেশ দিয়েছিলেন। এক বিবৃতিতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MHA) জানিয়েছে যে, আমিরের বক্তব্যটি চরমপন্থী এবং বিভাজক শিক্ষাগুলি প্রচার করেছে যা সিঙ্গাপুরের সম্প্রদায়িক ঐক্যের জন্য বিপজ্জনক এবং ক্ষতিকর।
সিঙ্গাপুরের আইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে. শানমুগম গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সংসদে বলেছিলেন যে, ওই অনুষ্ঠানে আমির non-Muslim দের ‘কাফির’ (অবিশ্বাসী) হিসেবে উল্লেখ করেন এবং চরমপন্থীদের ধর্মীয় নিষ্ঠার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যদিও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ (Internal Security Department (ISD)আমীর এবং তার পূর্ববতী রেকর্ড সম্পর্কে অবগত ছিল, তবে ওই বাংলাদেশি নাগরিক অনুষ্ঠানের দিন সিঙ্গাপুরে প্রবেশে অন্য নামের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছিলেন ফলে ডাটাবেসে থাকা তার নামের সাথে মেলেনি। তাছাড়া আমীরের বায়োমেট্রিক ডাটা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের multi-modal biometric database এ সংরক্ষিত ছিলো না কারণ সে প্রথমবারের মতো সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করেছিল।
এক বিৃবতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আমীর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত বাংলাদেশি সরকারকে “অত্যাচারী” বলে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন যে, তারা তাদের বিরোধিতাকারীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। সন্ত্রাসী যোগসূত্র, সন্ত্রাস-সম্পর্কিত কার্যকলাপ এবং জঙ্গিবাদে উসকানি দেওয়ার জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী আমির হামজাকে গ্রেফতার করেছিল। আমির হামজার বক্তব্যে বাংলাদেশের পার্লামেন্টে হামলার পরিকল্পনাকারী এএআই-সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী সন্দেহভাজনকে প্রভাবিত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জামিনে মুক্তি পান।
সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী, লাইসেন্সের শর্তাবলী লঙ্ঘনকারী ডরমিটরি অপারেটরদের প্রতি অপরাধের জন্য ৫০,০০০ পর্যন্ত জরিমানা, এক বছরের কারাদণ্ড, অথবা উভয় শাস্তির বিধান রয়েছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?