কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া (UBC)-এর কেলোনা ক্যাম্পাসের পাশের ওকানাগান লেক থেকে বাংলাদেশি যুবক শাশ্বত সৌম্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় সময় ২ জুন, সোমবার সকালে কানাডার পুলিশ এই লাশ উদ্ধার করে। নিহত শাশ্বত সৌম্য বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার বাসিন্দা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর একজন অত্যন্ত মেধাবী প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে দেশজুড়ে প্রযুক্তি, শিক্ষা ও গবেষণা মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শাশ্বত সৌম্য ছিলেন এক উজ্জ্বল প্রতিভার অধিকারী। ২০২১ সালে তিনি বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ (৪.০০) নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তার শিক্ষাজীবন ছিল দারুণ উজ্জ্বল ও অনুপ্রেরণাদায়ী। বুয়েট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প সময় শিক্ষকতা করার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT)-তে পিএইচডি করতে যান। তার গবেষণার বিষয় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ (NLP)।
শাশ্বতের প্রতিভা কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তা ছড়িয়ে পড়েছিল আন্তর্জাতিক গবেষণা পরিমণ্ডলেও। তিনি হার্ভার্ড, প্রিন্সটন ও বার্কলির মতো বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গবেষণা উপস্থাপন করেন। মৃত্যুর মাত্র দুই দিন আগে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়াতেও AI বিষয়ে বক্তব্য দেন এবং সেখানকার একটি গবেষণা গ্রুপ থেকে কাজের প্রস্তাবও পান। সম্প্রতি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন যে, তিনি কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা তার জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের প্রস্তুতি ছিল। ২ জুন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক থেকে শাশ্বত সৌম্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কানাডার রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (RCMP) জানিয়েছে, এখনও মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, প্রাথমিকভাবে কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণও মেলেনি। পুলিশ ধারণা করছে, এটি দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা হতে পারে। তবে, তদন্ত চলছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
শাশ্বতের অকাল মৃত্যুতে দেশের প্রযুক্তি, শিক্ষা ও গবেষণা মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার সাবেক সহপাঠী, শিক্ষক ও সহকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে স্মরণ করে বলেছেন—“শাশ্বতের মতো মেধাবী, বিনয়ী ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণের এই মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন।” একজন বুয়েট শিক্ষার্থী লেখেন, “সে শুধু একজন গবেষকই নয়, ছিল একজন পথপ্রদর্শক। তার চলে যাওয়া যেন আগামী দিনের এক সম্ভাবনার পতন।”
এই মেধাবী তরুণের আকস্মিক মৃত্যুতে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অবশ্যই এই মৃত্যুর পেছনে যদি মানসিক চাপ, অভিবাসনের জটিলতা, বা অন্য কোনো গভীর সামাজিক-মানসিক প্রভাব থাকে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?