ইসলামে ঈমানের ছয়টি রুকনের একটি হলো তাকদিরের ভালো ও মন্দে বিশ্বাস স্থাপন করা। এটি মানে হলো আল্লাহ যা কিছু আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, তা মেনে নেওয়া এবং এতে সন্তুষ্ট থাকা, পাশাপাশি যথাযথ প্রচেষ্টা ও উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে তাঁর ফায়সালাকে বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করা। তাকদিরের প্রতি এই বিশ্বাসের গুরুত্ব অত্যন্ত বড়, কারণ এটি একজন মুসলমানের জীবনের একটি মৌলিক অংশ।
তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশকে শরয়ী ভাষায় 'রিজা' বলা হয়। শায়খ ইবনু উসায়মিন (রহ.) বলেছেন, "আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকার অর্থ হলো মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদিরের ব্যাপারে অন্তরকে প্রশান্ত রাখা, প্রফুল্লচিত্ত থাকা এবং মানসিকভাবে ব্যথিত না হওয়া, যদিও আপতিত বিপদকে সে অপছন্দ করে" (শরহুল আকিদা, পৃ. ৩৭০-৩৭১)। এমন সন্তুষ্টি সত্যিই একটি বিশেষ মর্যাদা দেয় এবং এর সঙ্গে কিছু অসীম সুসংবাদও জড়িয়ে থাকে।
এখানে এমন কিছু সুসংবাদ তুলে ধরা হলো যা তাকদিরের প্রতি বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য রয়েছে:
যারা আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকে, তাদের আত্মাকে মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ জান্নাতের সুসংবাদ দান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে প্রশান্ত আত্মা! ফিরে চলো তোমার প্রভুর পানে, সন্তুষ্টচিত্তে ও সন্তোষভাজন অবস্থায়। অতঃপর প্রবেশ করো আমার বান্দাদের মধ্যে এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে” (সুরা : ফাজর, আয়াত : ২৭-৩০)। ইমাম মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘প্রশান্ত আত্মা হলো আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট আত্মা’ (তাফসিরে কুরতুবি : ২০/৫৭)।
তাকদিরের ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকার পরিসমাপ্তি হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও রহমত লাভের সুসংবাদ মেলে। আল্লাহ বলেন, “আর তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই ফিরে যাব। তাদের ওপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রয়েছে অফুরন্ত দয়া ও করুণা এবং তারা হলো সুপথপ্রাপ্ত” (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমার কোনো মুমিন বান্দাকে মুসিবতে নিক্ষেপ করি এবং সে আমার প্রশংসা করে, তখন সে নিষ্পাপ হয়ে যায়’ (মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৪৭০৯)।
তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো ঈমানের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পেরেছে, যে আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বিন হিসেবে এবং রাসুলকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে" (মুসলিম, হাদিস : ৩৪)। যখন একজন মুসলমান আল্লাহর ফায়সালায় পূর্ণ সন্তুষ্ট থাকে, তার হৃদয় শান্ত থাকে এবং ঈমানের প্রশান্তি অনুভব করতে পারে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই বড় পরীক্ষায় বড় পুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন, তখন তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। ফলে, যে পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হবে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি রয়েছে” (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০৩১)। যখন একজন বান্দা আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করেন এবং এর ফলস্বরূপ মহান পুরস্কার পাওয়া যায়।
ইবনুল জাওজি (রহ.) বলেন, “আমি এক বিস্ময়কর ব্যাপার দেখেছি যে, যখন কোনো মুমিনের ওপর বিপদ নেমে আসে, সে তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করে এবং তার দোয়া কবুলের কোনো লক্ষণ না দেখলে সে হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি সে আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তার দোয়া তৎক্ষণাৎ কবুল করেন” (সায়দুল খাতির : পৃ. ১৩৮)।
এভাবে, যারা আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য সুসংবাদ রয়েছে, যা তাদের জীবনে শান্তি, সুখ এবং সফলতা নিয়ে আসে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?