ঢাকার একটি হোটেল কক্ষে স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী সন্তানসহ মারা গেছেন সৌদি প্রবাসী মনির হোসেন (৪৫)। শনিবার রাতে খাবার খাওয়ার পরই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোববার সকালে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে চিকিৎসকদের মতে, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে পরীক্ষাগার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর।
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের বাসিন্দা মনির হোসেন প্রায় ২৭ বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলেন। দীর্ঘদিন প্রবাসে কষ্ট করে আয় করা টাকায় তিনি কেরানীগঞ্জে বাড়ি, আবাসন ব্যবসা ও দূরপাল্লার বাসের মালিকানাসহ বেশ কিছু সম্পদ গড়ে তোলেন। একমাত্র সন্তান আরাফাত (১৮) প্রতিবন্ধী। তার চিকিৎসার জন্যই গত সপ্তাহে দেশে ফেরেন মনির।
শনিবার
(২৯ জুন) ঢাকায় চিকিৎসকের
সাক্ষাৎ না পেয়ে পরিবারসহ
মগবাজারের ‘হোটেল সুইট স্লিপে’ ওঠেন
তারা। রাতের খাবার হিসেবে ‘ভর্তা ভাত’ নামের একটি
রেস্তোরাঁ থেকে খাবার নিয়ে
হোটেল কক্ষে খান তিনজন। খাওয়ার
কিছুক্ষণের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং
বমি করেন। ওষুধ খেয়েও পরিস্থিতির
উন্নতি না হওয়ায় রোববার
সকালে আদ-দ্বীন হাসপাতালে
নেওয়া হয়, যেখানে তিনজনকেই
মৃত ঘোষণা করা হয়।
সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে তিনজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
ফরেনসিক চিকিৎসক ডা. জাকিয়া তাসনিম
বলেন, “পুলিশের অনুরোধে রক্ত, ভিসেরা সহ বিভিন্ন নমুনা
সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে
পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার প্রতিবেদন আসার পর জানা
যাবে মৃত্যুর পেছনে আসল কারণ।”
তিনি
আরও বলেন, “মৃত্যুর সম্ভাব্য সব কারণ বিবেচনায়
রেখে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বিষক্রিয়া
ছাড়াও অন্য কোনো কারণে
মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।”
পরিবারের দাবি, হোটেলের খাবারেই বিষ মেশানো হয়েছিল।
তাদের সন্দেহ, মনির হোসেনের বিপুল
সম্পত্তির ওপর দখলের উদ্দেশ্যে
পরিকল্পিতভাবে খাবারে বিষ দেওয়া হয়।
রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন জানান, “ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকেলে তিনজনের মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলায় নিয়ে যাওয়া হয়।
একই পরিবারের তিনজনের আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোক ও রহস্যের ছায়া নেমে এসেছে। তবে চূড়ান্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এটি খাদ্যে বিষক্রিয়া, না কি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড—তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তদন্তে আসল সত্য উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছেন নিহতদের স্বজনরা।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?