যোগাযোগের সহজ মাধ্যম, দ্রুত ফাইল আদান-প্রদান এবং ভুল বার্তা মুছে ফেলার সুবিধা – এই সবকিছু মিলিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ আজ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে অফিসিয়াল, প্রায় সকল ধরনের যোগাযোগের জন্যই এই অ্যাপ অপরিহার্য। তবে ঠিক এই জনপ্রিয়তা এবং গ্রাহকবান্ধব বৈশিষ্ট্যগুলোই সাইবার প্রতারকদের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন কারিগরি কৌশল ব্যবহার করে তারা হানা দিচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টগুলোতে।
এই পরিস্থিতিতে নিজের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। অ্যাপ ব্যবহারের সময় অবশ্যই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি-র মাধ্যমে লক করে রাখুন। মনে রাখবেন, আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট শুধুমাত্র আপনার ব্যবহারের জন্যই।
নিরাপত্তায় যা করা প্রয়োজন
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করুন:হোয়াটসঅ্যাপ সেটিংস-এ গিয়ে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন অপশনটি অবশ্যই সক্রিয় করুন। এটি আপনার অ্যাকাউন্টের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
পিন নম্বর ব্যবহার করুন: টু-স্টেপ ভেরিফিকেশনের পাশাপাশি একটি শক্তিশালী পিন নম্বর ব্যবহার করে আপনার সিস্টেমকে আরও সুরক্ষিত করুন। এর ফলে প্রতারক চক্র কোনোভাবেই আপনার ফোন নম্বর ব্যবহার করে ভার্চুয়ালি আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না।
পিন নম্বর শেয়ার করবেন না: কোনো অবস্থাতেই টু-স্টেপ ভেরিফিকেশনের পিন নম্বর কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
ক্লাউড ব্যাকআপের ঝুঁকি: হোয়াটসঅ্যাপে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থা থাকলেও, ক্লাউডে ব্যাকআপ হিসেবে সংরক্ষিত ডেটা সাধারণত এনক্রিপ্টেড থাকে না। এর ফলে স্মার্টফোন পরিবর্তন করার সময় বা অন্য কোনো ডিভাইসে হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করলে পুরোনো ডেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউনলোড হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এই ব্যাকআপ প্রতারক চক্রের হাতে গেলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সেটিংস অপশনে গিয়ে চ্যাট ব্যাকআপের এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন অপশনটি চালু রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
অ্যাডভান্সড প্রাইভেসি সেটিংস: হোয়াটসঅ্যাপে নতুন যুক্ত হওয়া অ্যাডভান্সড চ্যাট প্রাইভেসি সুবিধাটি সক্রিয় করলে পাঠানো ভিডিও এবং ছবি প্রাপকের ডিভাইসের গ্যালারিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেভ হবে না। ব্যক্তিগত এবং গ্রুপ চ্যাট – উভয় ক্ষেত্রেই এই সুবিধা ব্যবহার করা যাবে। তবে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভিডিও বা ছবি সেভ করার সুযোগ থাকবে কিনা, সে বিষয়ে মেটা কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত কিছু জানায়নি। এই ফিচারটি বর্তমানে বেটা সংস্করণে পরীক্ষামূলকভাবে চালু আছে।
ডিসঅ্যাপিয়ারিং মেসেজ: হোয়াটসঅ্যাপের ‘ডিসঅ্যাপিয়ারিং মেসেজ’ অপশনটি চালু রাখলে নির্দিষ্ট সময় পর প্রেরিত সমস্ত কনটেন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাবে। এই অপশনের মাধ্যমে একদিন, সাত দিন বা নব্বই দিন – এই তিনটি সময়সীমার মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অ্যাডভান্সড চ্যাট প্রাইভেসি অপশনটি সক্রিয় থাকলে মেটা এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে না। ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় চ্যাট অপশনে ছবি তৈরি বা প্রশ্নোত্তর পাওয়া যাবে না। তবে মেটা এআই ব্যবহার করা না গেলেও কনটেন্ট ফরোয়ার্ড বা স্ক্রিনশট নেওয়ার সুযোগ বহাল থাকবে।
ডিসপ্লে পিকচারের নিরাপত্তা: হোয়াটসঅ্যাপের ডিসপ্লে পিকচারে (ডিপি) ব্যক্তিগত এবং স্পর্শকাতর মুহূর্তের ছবি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। প্রতারক চক্র এই ধরনের ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে।
বিশেষ প্রয়োজনে ডিপি বা স্ট্যাটাসে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করতে হলে, শুধুমাত্র নির্বাচিত ব্যক্তিদের (সিলেক্টিভ কনট্যাক্ট) দেখার অপশনটি সক্রিয় রাখুন।
সন্দেহজনক যোগাযোগ: পরিচিত কারো নাম করে আর্থিক সাহায্য চাওয়া বা অন্য কোনো সন্দেহজনক বার্তা পেলে দ্রুত বিশ্বাস করে কোনো পদক্ষেপ নেবেন না। প্রেরকের প্রোফাইল ছবি দেখে নিশ্চিত না হয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবেন না।
কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হন যে আপনি যার সাথে যোগাযোগ করছেন, তিনি সত্যিই আপনার পরিচিত ব্যক্তি কিনা। সন্দেহ হলে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করুন। হঠাৎ করে আসা সন্দেহজনক বা অচেনা ফোনকল এবং ভিডিওকল এড়িয়ে চলুন। কারণ, এভাবেই প্রতারক চক্র ফাঁদ পেতে প্রতিদিন অসংখ্য হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?