clock ,

গুজরাটে বিধ্বস্ত ড্রিমলাইনার, ২৪৭ জনের মৃত্যু

গুজরাটে বিধ্বস্ত ড্রিমলাইনার, ২৪৭ জনের মৃত্যু

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি বোয়িং ৭৮৭- ড্রিমলাইনার বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বিমানে থাকা ২৪২ জন আরোহীর কেউই বেঁচে নেই বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে।

দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৩২ জন যাত্রী ১০ জন ক্রু সদস্য সবাই নিহত হয়েছেন। এছাড়া হোস্টেল ভবনে থাকা জন মেডিকেল শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। গুরুতর আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী, যাদের বেশিরভাগকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি

বিমানটি আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। উড্ডয়নের মাত্র মিনিট পরই এটি রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং কাছাকাছি স্থাপিত গুজরাট সিভিল হাসপাতালের ইন্টার্নদের হোস্টেল ভবনে আছড়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আকাশে হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে সবাই হতবাক হয়ে যান।

দমকল বাহিনী এনডিআরএফ-এর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। বিমানটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারের কাজ চলছে। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA) দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে।

বিমানটি ছিল একটি আধুনিক Boeing 787-8 Dreamliner, যা সাধারণত দীর্ঘপথের জন্য ব্যবহৃত হয়। মাত্র উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই এর বিধ্বস্ত হওয়ায় প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা মানবিক ভুলউভয়ের সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত তথ্যও যাচাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী দল।

ঘটনার পর এক বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গভীর শোক প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে প্রতিরোধে ভারতীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বিমানবন্দরের আশপাশে বসবাসরতদের জন্য নিরাপত্তা পুনর্মূল্যায়নের কথাও উঠেছে।

আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাঢিক কন্ট্রোল এটিসি সূত্রে জানা গেছে, বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট শেষ মুহূর্তে বিপদবার্তা পাঠিয়েছিলেন। বিমানের পরিভাষায় একে বলে মে ডে কল। তবে এটিসি প্রযোজনীয় পদক্ষেপের জন্য নির্দেশ দেয়ার মধ্যেই বিমানটি একটি আবাসিক বাড়ির উপরে ভেঙে পড়ে। এর পর প্রচণ্ড বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। বিমান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দীর্ঘ যাত্রার জন্য বিমানটিতে প্রচুর জ্বালানি ছিল। ফলে সহজেই সব ঝলসে গেছে। ফলে বিমানের কারও বাঁচার আশা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। এমনকি যে আবাসনের উপরে বিমানটি ভেঙে পড়েছে সেটির বাসিন্দাদেরও মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রবল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনীসহ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।  
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ারঘণ্টা পরেও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি বিমানটি কিভাবে দুর্ঘটনায় পড়ে। তবে ফ্লাইট ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্লাইটরাডারের তথ্য থেকে জানা গেছে, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ৬২৫ ফুট উচ্চতায় উঠেছিল। স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।  
এয়ার ইন্ডিয়া সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছে, আহমেদাবাদ-লন্ডনগামী বিমানটি  লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে সেটি ভেঙে পড়ে বলে এয়ার ইন্ডিয়া নিশ্চিত করে জানিয়েছে বিমানটিতে ২৩০ জন যাত্রী, ২ জন পাইলট ১০ জন বিমানের ক্রু ছিলেন। 
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগাল জন কানাডার নাগরিক ছিলেন।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য