clock ,

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: কিশোরী মা ও মাতৃশিশু মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়াচ্ছে

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: কিশোরী মা ও মাতৃশিশু মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়াচ্ছে

আজ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, যার এবারের প্রতিপাদ্য 'জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত' প্রতি বছর এই দিনটি পালন করা হলেও, এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশে শিশু মাতৃমৃত্যুর বিষয়টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাতৃ শিশুমৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ এখনো বাল্য কিশোরী বিয়ে। এই সামাজিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে সন্তান প্রসবের সময় গর্ভবতী মায়েরা গুরুতর শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, যার ফলে অনেক সময় মৃত্যু ঘটে।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে মাতৃমৃত্যু কমলেও, ২০২২ ২০২৩ সালে তা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। ২০২২ সালে প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু হার ছিল ৬২, ২০২৩ সালে তা ৭৫ এবং ২০২৪ সালে এটি বেড়ে ৯০- পৌঁছেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩ সালের তথ্যমতে, প্রতি লাখ জীবিত শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ১৩৬ জন মা মারা যান। এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে বাল্য কিশোরী বিয়ে, যা মায়েদের শারীরিক ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে তিন লাখ নারী গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর মারা যান এবং ২০ লাখ শিশু তাদের জন্মের প্রথম মাসেই মারা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভধারণের পূর্বে কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি এবং সচেতনতার অভাব এই পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে। কিশোরী মায়েরা যখন গর্ভধারণ করেন, তখন তারা নিজের এবং শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকেন না, যার ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।

ডা. শাহনাজ খান, লালকুঠি মা শিশু হাসপাতালের উপপরিচালক, বলেন, “কিশোরী মায়েদের মধ্যে যে ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, যেমন খিঁচুনি, উচ্চ রক্তচাপ, এবং প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ, সেগুলি শুধুমাত্র মায়ের জন্যই বিপদজনক নয়, বরং শিশুর স্বাস্থ্যের ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এছাড়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, অনেক ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারেন না, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যেখানে চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য নয়। ফলে প্রসবের সময় রক্তক্ষরণের কারণে তাদের মৃত্যু ঘটে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

এছাড়া, বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হারও বেড়ে গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার হাজারে ২৭ জন ছিল, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাল্যবিবাহের কারণে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি, খিঁচুনি, উচ্চ রক্তচাপ, পুষ্টির অভাবও শিশু মায়ের মৃত্যু বাড়াচ্ছে।

এদিকে, ইউনিসেফের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার বিশ্বের মধ্যে অষ্টম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। প্রায় ৫১% নারী ১৮ বছরের আগে বিয়ে করেন, যা মাতৃমৃত্যুর একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানিয়েছেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মাতৃ শিশুমৃত্যু কমানোর জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য