সিঙ্গাপুরের কংক্রিট আর আলোয় মোড়া শহরের ভেতরে, গত ৪ মে বিকেলে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল এক ভিন্ন রঙের উৎসব। গোল্ডেন মাইল টাওয়ারের ‘দ্য প্রোজেক্টর’-এর ব্লুরুমে জড়ো হয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে কর্মরত শতাধিক প্রবাসী শ্রমিক। একে অপরের কাঁধে হাত রেখে তারা গাইলেন, কবিতা আবৃত্তি করলেন, শোনালেন নিজের গল্প, নাচলেন ক্লান্তি ভুলে। ঐক্যের এক মঞ্চে নিজেদের সম্মান জানাতেই ব্যতিক্রমী এই আয়োজন। অভিন্ন সুরে সবাই ঘোষণা করলেন, তারা শুধু এই শহরই নির্মাণ করছেন না, বরং নিজেদের এবং একে অপরের জন্য একটি শক্তিশালী সম্প্রদায়ও গড়ে তুলছেন।
‘মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স সিঙ্গাপুর’ নামে প্রবাসী শ্রমিকদের উদ্যোগে বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল লাইভ ব্যান্ড, বলিউডের হিন্দি গানের তালে ও নিজ নিজ মাতৃভাষায় একক ও দলীয় নৃত্য পরিবেশনা, বাংলাদেশি অভিবাসী কবি ও লেখক শরীফ উদ্দীন, মো. হায়দার আলী মাসুম, ফিলিপিনো অভিবাসী কবি ও লেখক জেনিলিন লেবেলির কবিতা আবৃত্তি, উন্মুক্ত মাইক্রোফোনে নিজেদের বলা গল্পের আবেগঘন মুহূর্তগুলো নিয়ে।
অনুষ্ঠানটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো আয়োজন থেকে দর্শক শ্রোতাদের বিনোদন পর্যন্ত সবকিছুই ছিল অভিবাসী শ্রমিকদের নিজস্ব আলোতে উজ্জ¦ল। সেখানে ছিল না কোনো কর্পোরেট জৌলুস, ছিল না পেশাদার ব্যবস্থাপনা—ছিল কেবল টুকরো টুকরো আবেগ, একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা, ঐক্যের ভিত্তিতে মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন।
বাংলার কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক একে এম মোহসীন আমন্ত্রিত ছিলেন বক্তা হিসেবে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অভিবাসী কর্মীদের সাথে পথ চলার গল্প শেয়ার করেন। আয়োজকদের একজন বলেন, আমরা এখানকার নাগরিক নই, কিন্তু আমাদের স্বপ্ন এখানকার নাগরিক স্বপ্নের চেয়েও বড়। আমরা শুধু ভবন বানাই না, আমরা বন্ধন গড়ি। আজকের দিনটি আমাদের সেই বন্ধন পালনের উৎসব।
উৎসব শেষে প্রবাসীরা জানান, এই দিনটি তাদের কাছে শুধুই একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং নিজেকে ফিরে পাওয়ার একটি আনন্দঘন মুহূর্ত।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?