ঢাকায় বাড়ছে চিকুনগুনিয়া, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৪৮

রাজধানী ঢাকায় ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে এডিস বাহিত চিকুনগুনিয়া। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। আক্রান্ত সবাই ঢাকার বাসিন্দা। চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গুও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৪৮ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

আইইডিসিআরের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৩৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৩ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আইইডিসিআর জানায়, জিকায় ১১ জন ও চিকুনগুনিয়ায় ৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এডিস মশা থেকেই চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, জিকা ও ইয়েলো ফিভার ছড়ায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে না আনলে এই চারটি রোগ আগামীতে ভয়াবহ আকারে ফিরে আসবে।
“দ্য রিঅ্যাপিয়ারেন্স অব চিকুনগুনিয়া ইন বাংলাদেশ, ২০২৪” শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে আশঙ্কা করা হয়েছে, ২০২৫-২৬ সালে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৯৬ শতাংশের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ৮১ শতাংশের ক্ষেত্রে ২৮ দিন পরও সেই ব্যথা রয়ে গেছে।
সরকারি পর্যায়ে বর্তমানে কেবল ঢাকাতেই এই রোগ পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সারাদেশে পরীক্ষার সুযোগ নেই প্রায় আট বছর ধরে।

আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, এখন একটি পরীক্ষাতেই ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়া শনাক্ত সম্ভব। চলতি বছর চিকুনগুনিয়ায় শনাক্তের হার ৪৫ শতাংশ হলেও এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো ঘটনা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুন করে ২৪৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৯২৬ জন। এর মধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগেই আছেন ৩ হাজার ১৯৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে আগামী ৩০-৪০ বছর ধরে এই রোগগুলো আমাদের সঙ্গে থাকবে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।”
চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ এবার আগেভাগেই দেখা দিচ্ছে। গবেষণা, চিকিৎসা ও রোগনির্ণয়ে প্রস্তুতি বাড়ানোর পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে জোর না দিলে সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন।