বাড়িতে তিনবেলা খাবারই জোটে না। কিশোর বয়সের দুরন্তপনায় মো. বিজয় ও রিমন হোসেন খাবারের বিনিময়ে অনেকের ছোটখাটো কাজ করে দিত। এভাবেই কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার দীঘলকান্দি গ্রামের স্থানীয় তেল ব্যবসায়ী মো. শাহাজুলের দোকানে জড়িয়ে পড়ে দু’জন। বিনিময়ে কখনও কিছু টাকা; আবার কখনও বিভিন্ন খাবার খেতে পারত। শাহাজুল তেল আনতে গেলেই তারা হাজির, ফিরে এসে সবাই মিষ্টি, পুরি, শিঙ্গাড়া, কেক খেয়ে এক ধরনের উৎসব করত। কিন্তু এই মিষ্টি-পুরি খাওয়াই বিজয়-রিমনের জন্য কাল হবে তা কেউ বুঝতে পারেনি।
গত ১২ আগস্ট রাতে শাহাজুলের সঙ্গে ভেড়ামারা উপজেলার মহিষাডোরায় দফাদার ফিলিং স্টেশনে তেল আনতে যায় দীঘলকান্দি গ্রামের বিজয় (১৭) ও রিমন (১৩)। তেল আনলোড দেখার সময় সেখানে বিস্ম্ফোরণের পর আগুন ধরে গেলে ঘটনাস্থলেই ব্যবসায়ী শাহাজুল (৩১) ও বিজয় মারা যান। দগ্ধ রিমন, পাম্পের কর্মচারী রাজীব আহমেদ (২৮) ও মো. বিদ্যুতকে (৩০) ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১৪ আগস্ট ভোরে মারা যান রাজীব। আর গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রিমন। রিমন দীঘলকান্দি গ্রামের ভূমিহীন দিনমজুর জয়নাল হোসেনের ছেলে।
ভেড়ামারা থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ বিদ্যুত ঢাকাতে চিকিৎসাধীন। স্বজনরা এখনও অভিযোগ দেননি। জেলা প্রশাসন তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রিমনের বাবা জয়নাল হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ ধরে রিমন মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছে। আমরাও আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু সব আশা বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে গেল। কোনো বাবার পক্ষেই এই কষ্ট মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ছেলেদের নিয়ে শাহাজুল প্রায়ই তেল আনতে যেতেন। তেল নিয়ে ফিরে সবাই মিষ্টি, পুরি, শিঙ্গাড়া খেত। আমার ছেলেও এসব করে আনন্দ পেত। ও মিষ্টি খাওয়ার পাগল ছিল। নিজে তো কিনে দিতে পারতাম না। তাই শাহাজুলের কাছ থেকে এসব পেয়ে তার বিভিন্ন কাজ করে দিত। মিষ্টিই আমার ছেলের জীবনের জন্য কাল হলো।
দীঘলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমরান হোসেন বলেন, রিমনের বাবা ভূমিহীন। রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে বাড়ি করে বসবাস করছেন। রিমনসহ গ্রামের অনেক ছেলেই শাহাজুলের কাছ থেকে খাবার পাওয়ার আশায় তেল এনে দিত। সেটিই যে তাদের জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেবে, তা আমরা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি।
দফাদার ফিলিং স্টেশনের মালিক আফানুজ্জামান জুয়েল বলেন, কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। দুর্ঘটনার পর থেকে পাম্প বন্ধ। চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করেও আমরা তাদের বাঁচাতে পারছি না।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে মনে হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |