সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলে দেশের প্রায় দুই ডজন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে এ বৈঠক হয়। প্রতিনিধিরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নানা উদ্বেগের বিষয় ও মতামত তুলে ধরেন। এ সময় আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধানের বিষয়ে গুরুত্ব দেন মিশেল ব্যাশেলে। জাতিসংঘের হাইকমিশনার বৈঠকে মন্তব্য করেন, আলোচনার দুয়ার যেন কোনোভাবেই রুদ্ধ না হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বৈঠকে ছিলেন। তিনি বলেন, বৈঠকে মানবাধিকারের মূল উদ্বেগগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে ২-৩ মিনিট করে বলেছেন। সে অর্থে আলোচনা হয়নি। পরিবেশের বিষয়ে আমি বলেছি, আমাদের আইন-কানুন সবই আছে, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে উন্নয়নটা অনেকটাই টপ ডাউন হয়ে যাচ্ছে, আলোচনা করে হচ্ছে তেমনটা না। ফলে যে পদ্ধতিগুলো সুরক্ষাকবচের ভূমিকা রাখতে পারত, সেগুলো দেখা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে আমরা পরিবেশবিধ্বংসী বা অনেক ব্যয়বহুল প্রকল্পে চলে যাচ্ছি।
বৈঠক প্রসঙ্গে খুশী কবির বলেন, সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। একেকজন একেকটি বিষয় তুলে ধরেছেন। কমবেশি মানবাধিকারের বিষয়গুলো নিয়েই কথা হয়েছে। আমরা যেমন বলেছি মানবাধিকার যেন বাস্তবায়ন হয়, আইনের শাসন যেন প্রতিষ্ঠা পায়।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্যে দেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিষয় উঠে এসেছে। মানবাধিকার পরিস্থিতিতে নারীর অবস্থা, প্রতিবন্ধীদের অবস্থা, আদিবাসীদের অবস্থা—এগুলো নিয়েও বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশ কর্মী, সাংবাদিক—এরা যে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করতে বারণ করা হয়েছে, সেটার বিষয়েও কথা হয়েছে। গুম হয়ে যাওয়া ভাইয়ের অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়েছেন স্বজনরা। বলা হয়েছে, দেশের মানুষ কোথাও গিয়ে এর বিচার ও প্রতিকার পাচ্ছে না। জবাবদিহিতার অভাবের কথা এসেছে। অনেক আইন-কানুন থাকার কারণে বেসরকারি সংস্থাগুলো মুক্তভাবে কাজ করতে পারছে না—এমন বক্তব্যও দিয়েছেন অনেকে।
হাইকমিশনার কী বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বৈঠকে উপস্থিত এক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, হাইকমিশনার বলেছেন, আমার কাছে ম্যাজিক নেই, কোনো সমস্যা ম্যাজিক্যালি সমাধানও হবে না। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টা দেশে সুশাসন, সরকার, গণতন্ত্র—এসব নিয়ে মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে। সমাধান আনতে কী কাজ করবে আর কী করবে না, তা চিহ্নিত করতে আমাদের কথা বলতে হবে। উনি (মিশেল ব্যাশেলে) চাচ্ছেন, পদ্ধতিটা এমন হোক যে সবাই আলোচনায় আসুক। আলোচনার দুয়ার যেন কোনোভাবেই রুদ্ধ না হয়।
মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর দুপুরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলে। সেখানে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। এরপর ব্যাশেলে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং জাদুঘরের পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন।
মিশেল ব্যাশেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজারে পৌঁছেন। আজ সকালে তিনি প্রথমে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প এক্স-৪-এ কর্মরত সংস্থাগুলোর লোকজন ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। সফরের শেষদিন আগামীকাল সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন মিশেলে ব্যাশেলে। এরপর ঢাকা ছাড়বেন।
মিশেল ব্যাশেলে চারদিনের সফরে রোববার ঢাকায় আসেন। ওইদিনই তিনি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |