সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩

৬ চৈত্র, ১৪২৯

সব

Singapore
Corona Update

Confirmed Recovered Death
59,879 59,746 29

Bangladesh
Corona Update

Confirmed Recovered Death
543,717 492,059 8,356

বাংলাদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে কোনোভাবেই শ্রীলঙ্কার তুলনা চলে না: দিল্লি

রঞ্জন বসু | ১২ আগস্ট ২০২২ | ৯:১১ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে কোনোভাবেই শ্রীলঙ্কার তুলনা চলে না: দিল্লি

বিশ্ব অর্থনীতি যতই সংকটে থাকুক, ভারত কিন্তু মনে করছে না এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। বরং মোদি সরকারের দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে কোনোভাবেই শ্রীলঙ্কার তুলনা চলে না। তবে ঢাকা কোনও সংকটে পড়লে দিল্লি যথাসাধ্য সাহায্য করতে পুরোপুরি প্রস্তুত আছে।

গত চব্বিশ ঘণ্টায় ভারতের একাধিক নীতি-নির্ধারক, গবেষক, সাবেক কূটনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে বাংলা ট্রিবিউন এমনই ইঙ্গিত পেয়েছে। গত কয়েক দিনে ভারতের একাধিক শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বহু প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। সেগুলোরও মূল কথা একটাই, বাংলাদেশের হাল শ্রীলঙ্কার মতো হবে— এমনটা ভাবার বিন্দুমাত্র কারণ নেই।

‘দ্য প্রিন্টে’র সম্পাদক ও দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক শেখর গুপ্তা তার ভিডিও ব্লগে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির তুলনামূলক বিচার করে বলেছেন, ‘পাকিস্তান যদি একেবারে তলানিতে থাকে, তার কয়েক ধাপ ওপরে শ্রীলঙ্কা এবং তারও অনেক ধাপ ওপরে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে এমনটা ভাবা বিরাট বোকামো হবে।’

‘দ্য ওয়াইওন’ আন্তর্জাতিক চ্যানেলের বিশেষ প্রতিবেদন ‘গ্রাভিটাসে’ নিউজ অ্যাঙ্কর পালকি শর্মা উপাধ্যায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চেয়েছে বলেই গেলো গেলো রব তোলার কিছু হয়নি। ১৯৯০ সালে ভারতের অবস্থা এরচেয়েও খারাপ ছিল। ডলার একেবারে ফুরিয়ে গিয়েছিল বলে তাদের আইএমএফের কাছে হাত পাততে হয়েছিল। তাতে ভারতের ভালোই হয়েছে। আজ তিন দশক পর ভারতের অর্থনীতির দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়।’

ভারতের আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ইন্ডিয়া অ্যাব্রড নিউজ সার্ভিসেও কলামে লেখক প্রিয়জিৎ দেব সরকার লিখেছেন— ‘হাসিনা স্ট্যান্ডিং ফার্ম ইন থিক অ্যান্ড থিন’। অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির নানা ওঠাপড়ার মধ্যেও শেখ হাসিনা কীভাবে শক্ত হাতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন, নিবন্ধে সেটাই তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এবং ভারতের অজস্র মিডিয়াতে সেটি প্রকাশ হয়েছে।

কিন্তু কীসের ভিত্তিতে ভারত মনে করছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি মোটেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় নয়? আর কেনই বা বাংলাদেশের যে কোনও সঙ্কটে ভারতকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দিল্লিতে বাংলা ট্রিবিউন কথা বলেছিল ভারতের এক সাবেক সিনিয়র কূটনীতিবিদ, একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও একটি শীর্ষস্থানীয় স্ট্র্যাটেজিক থিংকট্যাঙ্কের গবেষকের সঙ্গে। তাদের বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসার—

দেব মুখার্জি (ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার)

‘শ্রীলঙ্কাই বলি বা পাকিস্তান, নেপালই বলি বা বাংলাদেশ— আমাদের এই গোটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেই এই মুহূর্তে একটা টালমাটাল অবস্থা চলছে। এখন অবধি ভারত এই সংকটের আঁচ অনেকটাই এড়াতে পেরেছে।

এই পরিস্থিতির অনেকগুলো কারণ আছে। তবে ইমিডিয়েট ট্রিগারটা অবশ্যই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যা দুনিয়ার আরও বহু দেশের মতো এই অঞ্চলেও একটা ‘ইনডেফিনিট কার্স’ (অনির্দিষ্টকালীন অভিশাপ) বয়ে এনেছে। এই যুদ্ধের কারণে যেভাবে জ্বালানির সংকট তৈরি হয়েছে, যেভাবে ডলারের দাম বাড়ছে— তার ফল ভুগতে হচ্ছে উন্নত, উন্নয়নশীল বা গরিব সব দেশকেই।

আমি মনে করি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও সেই সংকটের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে।

এখন বাংলাদেশের কোনও প্রয়োজন হলে ভারত কীভাবে তাদের সাহায্য করতে পারে, কতটা পারে— এই প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা তার মুখপাত্রই দিতে পারবেন। তবে আমার রিডিং হল, গত কয়েক বছর ধরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের যে রূপরেখা, তাতে বাংলাদেশের যে কোনও বিপদে ভারতের অবশ্যই সাহায্য করা উচিত, আর তারা সেটা করবেও।’

 . সঞ্জয় ভরদ্বাজ (জেএনইউতে অধ্যাপক, দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ)

‘বাংলাদেশ আইএমএফের সাহায্য চেয়েছে বা সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলেই ভারত মনে করছে সে দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়েছে, বিষয়টা মোটেও সেরকম নয়। ভারত নিজেও অতীতে আইএমএফের সহায়তা চেয়েছে। জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কমানোর প্রয়োজনীয়তা ভারতও উপলব্ধি করে।’

‘আবার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভারতের যে পরিমাণ স্টেক (স্বার্থ) ও ইনভেস্টমেন্ট (বিনিয়োগ) আছে তা অপরিসীম। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন এখন পুরোপুরি বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সে দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে, তা কানেকটিভিটি হোক বা অবকাঠামোর উন্নয়ন— ভারত কোটি কোটি ডলার লগ্নি করেছে। বাংলাদেশকে প্রায় সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিট দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপদে পড়া মানে এই বিপুল বিনিয়োগ হুমকিতে পড়া। ভারত যা কিছুতেই হতে দিতে চাইবে না।

‘শ্রীলঙ্কার উন্নয়নের ধারা কিন্তু ভারতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল না। শ্রীলঙ্কা একটা নিজস্ব গতিপথ নিয়ে চলছিল। যার সঙ্গে ভারতের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক কমই ছিল। নানা কারণে সেটা আচমকা মুখ থুবড়ে পড়লো। এখন সেই শ্রীলঙ্কার বিপদেও কিন্তু ভারত সাড়ে চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতি যেহেতু অনেকটাই এক তারে বাঁধা, তাই বাংলাদেশের প্রয়োজনে ভারতকে যে (শ্রীলঙ্কার চেয়েও) অনেক বেশি কিছু করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’

 . স্ম্রুতি পট্টনায়ক (সিনিয়র ফেলো, ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিস, দিল্লি)

‘গত দুবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স অনেকটা কমেছে। তা ছাড়া রফতানি খাতে তাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা যারা— সেই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র বহু অর্ডার বাতিল করায় রিজার্ভেও টান পড়েছে। কিন্তু এগুলো এমন সব বিষয় যার ওপর বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল না।’

“তবে ভারতের নীতি নির্ধারকরা এটা বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনা সরকার যে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছেন এটা একটা ‘প্রিএম্পটিভ মুভ’—অর্থাৎ অনাগত বিপদ এড়ানোর জন্য আগেভাগেই নেওয়া পদক্ষেপ। সোজা কথায়, বাংলাদেশ যাতে কোনোভাবেই শ্রীলঙ্কার অবস্থায় না যায়, সেটার জন্য আগে থেকে তারা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যেটা প্রশংসার যোগ্য। শেখ হাসিনা ইজ বিইয়িং এক্সট্রা কেয়ারফুল আই য়ুড সে।”

বাংলাদেশের দরকারে ভারতের সাহায্য করার অনেকগুলো রাস্তা আছে। ভারত যে লাইন অব ক্রেডিট বাংলাদেশকে দিয়েছে, তার পরিশোধের সময়সীমা গড়ে ১৫ বছর। সেটা পিছিয়ে দেওয়া বা রিশিডিউল করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের গারমেন্টের কাঁচামাল ভারত থেকেই মূলত যায়। সেটা কেনার সময় ডলারে পেমেন্ট না করে রুপিতে পেমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। যেটাকে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক ‘কারেন্সি সোয়াপ অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বলে। এতে বাংলাদেশের ডলার রিজার্ভের ওপর চাপ কম পড়বে।

দিল্লি

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Facebook Comments Box

সর্বশেষ
সর্বাধিক পঠিত
এ বিভাগের আরও খবর
আর্কাইভ
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১