পর্তুগালের আলেনতেজো অঞ্চলের অন্তর্গত ওদিমিরা মিউনিসিপ্যালিটির অধীনস্থ ছোট্ট শহর ভিলা নোভা দ্য মিলফোনতেস। প্রায় সাত হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ শহরের মোট আয়তন ৭৬ দশমিক ৪৮ বর্গকিলোমিটার। পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নৈসর্গিক শহর মিলফোনতেস। এ শহরের বুকজুড়ে বয়ে চলা মিরা নদী শহরের অদূরেই আটলান্টিক মহাসাগরে মিশেছে। ১৪৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মিলফোনতেস পর্তুগালের অন্যতম প্রাচীন শহর। মিরা নদী ও আটলান্টিক মহাসাগরের তীরবর্তী হওয়ায় এ শহর অর্থনৈতিকভাবে পর্তুগালে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নদী ও সমুদ্রবন্দরবহুল মিলফোনতেসের অর্থনীতি মূলত কৃষি ও পর্যটকনির্ভর। এখানকার অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত জলপথে সম্পন্ন হয়। তবে লিসবন কিংবা পোর্তোর সঙ্গে সড়কপথেও যোগাযোগের চমত্কার ব্যবস্থা রয়েছে।
মিলফোনতেসে রয়েছে সুবিস্তৃত সমুদ্রসৈকত, যা পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে শহরটিকে। গ্রীষ্মে পর্তুগালের স্থানীয় অধিবাসী তো বটেই, পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষের পদচারণার মুখরিত থাকে ভিলা নোভা দ্য মিলফোনতেস। এটি বড় শহর থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় মিলফোনতেস ঘুরতে আসা পর্যটকরা অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি পরিবেশে সমুদ্রসৈকতে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। এখানকার বালুময় সমুদ্রসৈকত রৌদ্রস্নানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। পাশাপাশি এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মাছ ধরা, ডাইভিং, সার্ফিং, ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুবিধা রয়েছে।
মিলফোনতেসের অদূরে রয়েছে অসংখ্য কৃষি ফার্ম। এখানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে টমেটো, চালকুমড়া, র্যাপসবেরি, ব্লুবেরি, স্ট্রবেরির চাষ হয়। এসব কৃষি ফার্মে বিশেষত দক্ষিণ এশীয়রা কাজ করেন। পর্তুগালে নিয়মিত হওয়ার জন্য আবেদন করা বিপুলসংখ্যক মানুষ এখানে কাজ করেন। পর্তুগালে নিয়মিত হতে আবেদন করা (টেম্পোরারি রেসিডেন্সির আবেদন করা) বাংলাদেশী কর্মীদের একটি বড় অংশের কর্মসংস্থান হয়েছে এসব কৃষি ফার্মে। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ও উন্নত প্রযুক্তিবহুল এসব ফার্মে অপেক্ষাকৃত কম খাটুনি করে অধিক উপার্জনের জন্য বাংলাদেশী কর্মীরা এখানে কাজের সন্ধানে আসেন। এখানে কর্মসংস্থান হওয়া কর্মীদের জন্য রয়েছে উচ্চবেতনের নিশ্চয়তা। কৃষি ফার্মগুলো কর্মীদের জন্য নিজেদের উদ্যোগে এখানে আবাসন, পরিবহন ও খাদ্যের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ফলে বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কর্মীদের সরব পদচারণায় মুখরিত এখানকার কৃষি ফার্মগুলো। তবে এখনো এখানে বিপুলসংখ্যক কর্মী প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশীসহ যেসব দক্ষিণ এশীয় কর্মী পর্তুগালের বিভিন্ন স্থানে কর্মবিহীনভাবে জীবনযাপন করছেন, তারা মিলফোনতেসের কৃষি ফার্মগুলোয় চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন।
মিলফোনতেসে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশীর বসবাস। তার মধ্যে রয়েছে ৫০টির অধিক বাংলাদেশী পরিবার। এসব বাংলাদেশী নাগরিক এখানে কৃষি, ব্যবসা, যানবাহন চালনা ও সেবা খাতে অংশগ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ফলে এখানে বাংলাদেশী নাগরিকদের বিনিয়োগে বেশকিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। যেখানে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সম্মানের সঙ্গে এখানকার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করেছেন। ২০১৬ সালের দিক থেকে পর্তুগালের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের একটি বড় অংশ কাজের সন্ধানে মিলফোনতেসে আসেন। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে দুই-চারটা বাংলাদেশী পরিবার বসবাস করলেও তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিশেষ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন না।
২০১৭ সালের দিকে মিলফোনতেসে বেশকিছু তরুণ বাংলাদেশী উদ্যোক্তার আগমন ঘটে। তারা এখানকার পর্যটননির্ভর অর্থনীতি বিবেচনায় রেখে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। পরবর্তী সময়ে তাদের মাধ্যমে এখানে আরো বাংলাদেশীর আগমন ঘটে এবং তাদের কর্মসংস্থান হয়। বর্তমানে বাংলাদেশীদের নিয়ন্ত্রণে এখানে মিনি-মার্কেট, ইলেকট্রনিকস শপ, রেস্তোরাঁ, হোটেল প্রভৃতি পরিচালিত হচ্ছে।
অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর মিলফোনতেস কিছুটা ব্যয়বহুল। মূলত পর্যটননির্ভর অর্থনীতি হওয়ায় এখানকার মানুষের গড় আয় অপেক্ষাকৃত বেশি। ফলে এখানে জীবনযাত্রার খরচও বেশি। মিলফোনতেসে একটি আনন্দময় ও নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা রয়েছে। এখানকার অধিবাসী ও ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পর্তুগিজ বর্ডার গার্ডের (জিএনআর))। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে এ বাহিনী। ফলে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে নিশ্চিন্তে এখানে অবকাশ যাপন ও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে।
পর্তুগালের দক্ষিণের নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত শহর মিলফোনতেস। বড় নগরের যান্ত্রিক ও কোলাহলযুক্ত জীবন থেকে একটু মুক্তিলাভ ও প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে মিলফোনতেসে। সমুদ্রের তীরে বসে জীবনকে একটু অন্যভাবে উপভোগ করা কিংবা নিশ্চিন্তে রৌদ্রস্নানের অভিজ্ঞতা গ্রহণের জন্য পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুটে আসে মিলফোনতেসে। এখানকার নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ও সমুদ্রের গর্জন উদ্বেলিত করে নারী-পুরুষের মন। এক কথায় ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিমের ছোট্ট এ শহরে পা না দিলে পর্তুগাল ভ্রমণের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অপূর্ণ থেকে যায়।
লেখক: শিক্ষার্থী, মাস্টার্স, নোভা স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস, পর্তুগাল
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |