ভারতে পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা সাধারণত স্থানীয় প্রতিষ্ঠান মাহিন্দ্রার নির্মিত গাড়ি ব্যবহার করেন, যা ভারতের বাজারে ২০ থেকে ২৫ লাখ রুপি (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০-৩৫ লাখ) দামের মধ্যে পড়ে। টহল কার্যক্রমের জন্যও তারা মাহিন্দ্রা ও টাটার বিভিন্ন মডেলের ডাবল কেবিন পিকআপ ব্যবহার করে।
শ্রীলঙ্কায় পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা মাহিন্দ্রা ব্র্যান্ডের গাড়ি ব্যবহার করেন, আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে হুন্দাই ইলান্ট্রা মডেলের গাড়ি, যার বাংলাদেশি বাজারমূল্য ৪৫ লাখ টাকার বেশি। এছাড়া টহল কার্যক্রমে ব্যবহৃত মডেলগুলোর দাম সাধারণত ২০-২৫ লাখ রুপির মধ্যে থাকে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের এসপি থেকে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা টয়োটা, নিশান, মিৎসুবিশির মতো উচ্চমূল্যের এসইউভি ব্যবহার করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এসপি থেকে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস মডেলের কালো ও সাদা রঙের এসইউভি বরাদ্দ রয়েছে, যার একেকটির দাম পড়েছে ৭৫ লাখ টাকা।
বর্তমানে মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস কিউএক্স মডেলের পাঁচটি নতুন এসইউভি কেনা হচ্ছে, প্রতিটির মূল্য ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এই পাঁচটি গাড়ির জন্য বরাদ্দ ৮ কোটি ৪৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এছাড়া, ১৫টি ২,০০০ সিসির এসইউভি কেনা হবে, যার প্রতিটির দাম ৬৫ লাখ টাকা। ডাবল কেবিন পিকআপ কেনা হবে ২০০টি, প্রতিটির মূল্য ৫৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৪১৮টি নতুন যানবাহন কেনার জন্য ১৮৯ কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেছেন, “ভারত ও শ্রীলঙ্কার পুলিশ কম মূল্যের গাড়ি ব্যবহার করেও সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে থাকে। আমাদের পুলিশের কেন এত দামি গাড়ি দরকার হয়, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করব। আমি নিজে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হয়ে ২৭ লাখ টাকা দামের গাড়ি ব্যবহার করি। সেখানে এসপিদের জন্য কেন এত ব্যয়বহুল গাড়ি প্রয়োজন?”
বিশ্লেষকদের মতে, উচ্চমূল্যের বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহার পুলিশের মধ্যে উচ্চাভিলাষী প্রবণতা তৈরি করেছে এবং তাদের অবৈধ আদেশ পালনে উৎসাহিত করেছে। অতীতেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পুলিশকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা বাহিনীর অভ্যন্তরে বৈষম্যেরও জন্ম দিয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি মনে করেন, “বিগত সরকার পুলিশ প্রশাসনকে খুশি রাখতে বিলাসবহুল গাড়িসহ নানা সুবিধা দিয়েছে। এটি কেবল জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয় এবং সরকারি ব্যয় কমাতে এসব নীতি পরিহার করা প্রয়োজন।”
সরকারি ব্যয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও পুলিশের প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত মূল্যের যানবাহন কেনার বিষয়টি ভবিষ্যতে গুরুত্ব দিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?