দেউলিয়া শ্রীলংকা এবং অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তানও গত বছর পুঁজিবাজারে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির পুঁজিবাজারগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রিটার্ন এসেছে এই দুটি দেশের বাজারে। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে সামান্য নেতিবাচক রিটার্ন থাকলেও বেশিরভাগ দেশের পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় ছিল। এ ক্ষেত্রে সূচকের রিটার্ন, বাজার মূলধন, লেনদেন এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণসহ প্রায় সব সূচকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ছিল সবচেয়ে পিছিয়ে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫৪ সালে, যখন এটি পূর্ব পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে এর নাম হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবে ছয় দশকের দীর্ঘ পথচলার পরও এটি উদ্যোক্তাদের মূলধন সংগ্রহের জন্য নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে পারেনি।
২০২৪ সালে এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার প্রায় সব সূচকে পিছিয়ে ছিল। উদাহরণস্বরূপ:
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা: বাংলাদেশে ৩৬০টি, যেখানে ভারতে ৫,৫৬৪, ইন্দোনেশিয়ায় ৯৪৩ এবং পাকিস্তানে ৫২৩টি।
বাজার মূলধন (২০২৪ সালের শেষে):
বাংলাদেশ: ২,৯৯৬ কোটি ডলার
শ্রীলংকা: ১,৬৪৫ কোটি ডলার
ভারত: ৫,২৮,৭৪৮ কোটি ডলার
ইন্দোনেশিয়া: ৭৫,৫৮০ কোটি ডলার
জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধন:
বাংলাদেশ: ৬.৬%
ভারত: ১৩৬%
শ্রীলংকা: ২২.১%
ইন্দোনেশিয়া: ৫৪%
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের গড় লেনদেনের পরিমাণ মাত্র ৩.২০ কোটি ডলার, যেখানে ভারতের গড় লেনদেন ছিল ২,৩৩১ কোটি ডলার। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ১%। পুঁজিবাজারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং কারসাজির কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্রমাগত কমছে। ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর থেকে পুনরুদ্ধারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে কর সুবিধা এবং স্বচ্ছ নীতি প্রণয়ন জরুরি।
করণীয়
বাজারে নতুন পণ্য প্রবর্তন: বন্ড মার্কেট এবং ডেরিভেটিভস বাজার গড়ে তোলা।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির গুণগত মান উন্নয়ন: ভালো মানের কোম্পানি নিয়ে আসা।
স্বচ্ছ ও আধুনিক নীতি প্রণয়ন: শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির আধুনিকায়ন এবং অটোমেশনের মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা: অতীতের অনিয়ম রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, সুশাসন ফেরাতে এবং বাজারের কাঠামোগত পরিবর্তনে ফেব্রুয়ারি-মার্চে একটি রূপরেখা প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার অত্যন্ত জরুরি। সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং কার্যকর নীতিমালা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?