clock ,

আওয়ামী লীগ সরকার আল-জাজিরার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের সঙ্গে পরামর্শ করেছে

আওয়ামী লীগ সরকার আল-জাজিরার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের সঙ্গে পরামর্শ করেছে

খ্যাতনামা ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ডেসমন্ড ব্রাউন কেসি ২০২১ সালে আল-জাজিরার প্রচারিত একটি সমালোচনামূলক তথ্যচিত্রের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে যে, ওই সময় সরকার তথ্যচিত্রের সঙ্গে জড়িত ডেভিড বার্গম্যানকে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার করার পরিকল্পনা করেছিল।

তথ্যচিত্রটির শিরোনাম ছিলঅল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান ওই ভিডিও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, কীভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধীদের অপহরণ এবং অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার মদদে দেশে দুর্নীতির প্রসার কেমন হয়েছিল, সেটিও প্রতিবেদনে উঠে আসে।

প্রতিবেদনটি ইউটিউবে কোটিরও বেশি বার দেখা হয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে। অন্যদিকে, প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ এবং তার ভাইদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। বাংলাদেশ সরকার তখন প্রতিবেদনটিকে "মিথ্যা, মানহানিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত" বলে অভিহিত করে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর, তথ্য ফাঁসকারী হুইসেলব্লোয়ার জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাইকে লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয়। এমনকি, যারা প্রতিবেদনের কাজে সহায়তা করেছিলেন, তাদের অনেকেই ভয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

রাষ্ট্রীয় এই দুর্নীতি কুকীর্তি প্রকাশিত হওয়ার পর তা ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, আল-জাজিরার বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে পরামর্শ নিতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা প্রখ্যাত ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ডেসমন্ড ব্রাউন কেসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

সানডে টাইমস আরও জানায়, গত আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার বাড়ি থেকে এই সম্পর্কিত একটি নথি উদ্ধার করা হয়। ওই নথিতে উল্লেখ ছিল, ব্যারিস্টার ব্রাউন বিষয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছিলেন।

পরে ব্যারিস্টার ব্রাউন আইনজীবী ক্লার্ক উইলিয়ামসের সঙ্গে হাসিনার প্রতিনিধিদের পরিচয় করিয়ে দেন। উইলিয়ামস যুক্তরাজ্যে আল-জাজিরা প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার বাড়ি থেকে পাওয়া নথিতে উল্লেখ ছিল যে, তার সরকার আল-জাজিরার পাশাপাশি ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। বার্গম্যান ওই প্রতিবেদনে সহায়তা করেছিলেন।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, বার্গম্যানের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এবং একপর্যায়ে তাকে আটক করার পরিকল্পনাও করেছিলেন।

সানডে টাইমস জানায়, হাসিনার প্রতিনিধিরা আইনজীবী ক্লার্ক উইলিয়ামসকে জানান যে, প্রতিবেদনে অনেক তথ্য অসম্পূর্ণ হলেও এটি শেখ হাসিনার মানহানি ঘটিয়েছে। তখন আল-জাজিরা বার্গম্যানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার বিষয়ে আলোচনা হয়। মামলাটি জেনারেল আজিজ করবেন, নাকি বাংলাদেশ সরকার, তা নিয়েও আলোচনা হয়। এমনকি অবসরপ্রাপ্ত কোনো সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে মামলা দায়ের করার কথাও ভাবা হয়েছিল।

তবে যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা করার ইচ্ছা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত হাসিনা সরকার তা করেনি। এর বদলে ইউটিউব ফেসবুককে ওই ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু ইউটিউব ফেসবুক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও বাংলাদেশের হাইকোর্ট হাসিনার পক্ষে ভিডিও সরানোর রায় দিয়েছিল, তবুও ভিডিওটি ইউটিউবে রয়ে যায়।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য