রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতাল জানিয়েছে তার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হয়েছে। অপরদিকে, ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মহান ধর্মগুরুর অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। তিনি বিপদমুক্ত নন।’ রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এমনটাই জানিয়েছে একাধিক পশ্চিমা গণমাধ্যম।
গত ২৪ ঘণ্টায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পোপের শারীরিক অবস্থার ইতিবাচক কিছু লক্ষ্য করেনি চিকিৎসকরা। জ্ঞান থাকলেও তীব্র হয়েছে শ্বাসকষ্ট। কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে তাকে। প্লাটিলেট কমে যাওয়া আর অ্যানিমিয়ার কারণে রক্তও দিতে হয়েছে।
গত দু'বছর ধরে নানাবিধ অসুস্থতায় ভুগছিলেন পোপ। ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে তাঁর। তরুণ বয়সে তাঁর প্লুরিসি রোগ হয়েছিল এবং তাঁর একটি ফুসফুসের অংশবিশেষ কেটে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন ভক্তরা। একই বছরের ২০১৩ সালে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শের পদত্যাগের পর ১৩ই মার্চ ফ্রান্সিস পোপের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ঐতিহ্যগতভাবে, ক্যামারলেঙ্গো (ভ্যাটিকানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) পোপের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। বর্তমানে এই পদে রয়েছে আইরিশ কার্ডিনাল কেভিন ফারেল। পোপের মৃত্যু হলে ফারেলই তাঁকে প্রথম দেখতে যাবেন। এর পর তাঁর নাম ধরে ডেকে আরও একবার জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। চিকিৎসায় সারা দেওয়া বন্ধ করে দিলে ঐতিহ্য অনুযায়ী, তাঁর স্বাক্ষরের আংটিটি বিকৃত বা ধ্বংস করা দেওয়া হবে। তাঁর আংটি পোপের নথির সীলমোহর হিসেবে কাজ করে। আংটি বিকৃত বা ধ্বংস করে দেওয়ার অর্থ তাঁর রাজত্বের সমাপ্তি। পোপের বাসস্থানগুলি সিল করে দেওয়া হবে। ক্যামারলেঙ্গো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিচালনা পর্ষদকে জানাবেন যে পোপ মারা গিয়েছেন। এরপর ভ্যাটিকান গণমাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়ে বিশ্ববাসীকে পোপের মৃত্যুর খবর জানাবে।
পোপের মৃতদেহ সাধারণত মৃত্যুর চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে সমাহিত করা হয়। এর নেতৃত্বে থাকেন কলেজ অফ কার্ডিনালসের ডিন। বর্তমানে সেই পদে রয়েছেন ৯১ বছর বয়সী ইতালীয় জিওভান্নি বাতিস্তা রে। সাধারণত, পোপকে ভ্যাটিকান গ্রোটোসে সমাহিত করা হয়, যা সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকার নীচে অবস্থিত। যদিও, ২০২৩ সালে একটি সাক্ষাৎকারে পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন রোমের সান্তা মারিয়া ম্যাগিওর ব্যাসিলিকায় যেন তাঁর দেহ রাখা হয়। দেহ সমাধি দেওয়ার পর নয় দিন শোক পালন করা হবে।
পোপের শেষকৃত্যের প্রায় তিন সপ্তাহ পর নতুন পোপ নির্বাচন করা হবে একটি অত্যন্ত গোপনীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। গত ৭০০ বছর ধরে এই ঐতিহ্য চলে আসছে। কলেজ অফ কার্ডিনালস সিস্টিন চ্যাপেলে একটি সম্মেলন আয়োজনের জন্য আহ্বান জানাবে। সেখানে ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন পোপকে বেছে নেওয়া হবে। অন্তত দুই তৃতীয়াংশ ভোটে জয়ী হতে হবে। কার্ডিনাল লুইস আন্তোনিও তাগলে, কার্ডিনাল পিয়েত্রো পারোলিন, কার্ডিনাল উইম এইক, কার্ডিনাল পিটার এর্দো, কার্ডিনাল মারিও গ্রেচ, কার্ডিনাল মাতিও মারিয়া জুপ্পি, কার্ডিনাল রেমন্ড বুর্কে, কার্ডিনাল ফ্রিডোলিন অ্যামবঙ্গো বেসুঙ্গু পোপের পদের অন্যতম দাবিদার।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?