clock ,

১৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি;সিঙ্গাপুর থেকে ইন্দোনেশীয় ব্যবসায়ীর প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু

১৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি;সিঙ্গাপুর থেকে ইন্দোনেশীয় ব্যবসায়ীর প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু

সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেওয়া ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী পাওলুস তান্নোসকে (যিনি চিন থিয়ান পো নামেও পরিচিত) দেশে ফিরিয়ে আনতে আনুষ্ঠানিক প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। ১৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।

মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে পলাতক তালিকায় থাকা পাওলুস তান্নোস ২০১৭ সাল থেকেই সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। সিঙ্গাপুর সরকার গত ১৭ জানুয়ারি তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানায়। সিঙ্গাপুরের আইন মন্ত্রণালয় গত ১০ মার্চ এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে. শানমুগম জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুর বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।ইন্দোনেশিয়ায় একটি দুর্নীতির মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিঙ্গাপুরে রিমান্ডে আছেন এবং প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন, তিনি জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। ১৩ মার্চ স্টেট কোর্টের এক শুনানিতে, ডেপুটি সিনিয়র স্টেট কাউন্সেল সারাহ সিয়াও জানান যে, ৬০-বছর বয়সী পাওলুস তান্নোসের জামিন আবেদন সংক্রান্ত নথিপত্র ১১ মার্চ জমা দেওয়া হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া সরকারের দাবি, পাওলুস তান্নোস দেশের ইলেকট্রনিক জাতীয় পরিচয়পত্র (-কেটিপি) প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এই প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে সরকারের প্রায় লাখ ৩০ হাজার কোটি রুপিয়া (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯০০ কোটি টাকা) ক্ষতি হয়েছে।

তান্নোস ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রযুক্তি সংস্থা শানদিপালা অর্থপুত্র-এর প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান -কেটিপি প্রকল্পের কাজ পেয়েছিল, যেখানে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে বলে অভিযোগ।

তান্নোস সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি দুই বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিঙ্গাপুর ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে ২০২৪ সালের ২১ মার্চ প্রত্যর্পণ চুক্তি কার্যকর হয়। চুক্তির আওতায় দুর্নীতি, অর্থ পাচার ঘুষের মতো অপরাধের জন্য ১৮ বছর আগের অপরাধীদেরও প্রত্যর্পণ করা যাবে।

২৩ জানুয়ারির শুনানিতে তান্নোস দাবি করেন, তিনি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি-বিসাউয়ের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বহন করেন। তবে সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি জানিয়েছেন, যেহেতু তিনি সিঙ্গাপুরের অনুমোদিত কূটনীতিক নন, তাই এই পাসপোর্ট তাঁকে কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা (ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি) দেবে না। তান্নোস জানিয়েছেন, তিনি ইন্দোনেশিয়া যেতে রাজি নন, তবে গিনি-বিসাউ যেতে চান।

সিঙ্গাপুরের আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, যদি তান্নোস স্বেচ্ছায় প্রত্যর্পণে রাজি হতেন, তাহলে ছয় মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন হতে পারত। কিন্তু তিনি আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে।

সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ প্রত্যর্পণ মামলা দুই বছর স্থায়ী হয়েছিল। ২০২৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়া ভারতীয় দুই ভাই অবিনাশ কুমার ঝা রজনীশ কুমার ঝাকে ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হয়।

তান্নোসের জামিন পর্যালোচনা পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তবে তাঁর আইনজীবীরা আপিল করতে পারেন, যা প্রক্রিয়াটিকে আরও দীর্ঘ করবে।

সিঙ্গাপুর সরকার জানিয়েছে, তারা আইনি কাঠামোর মধ্য থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য