হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিতর্কে জড়িয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, এক পর্যায়ে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে বলা হয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গেছে, বৈঠকের সময় পোশাক নিয়েও কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে জেলেনস্কিকে। এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, “কেন আপনি স্যুট পরেননি? আমেরিকার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দফতরে এসেছেন স্যুট ছাড়া?” এরপর খানিকটা ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে তিনি আরও বলেন, “আপনার আদৌ স্যুট আছে তো?”জবাবে জেলেনস্কি সপ্রতিভভাবে বলেন, “যুদ্ধ শেষ হলে আমি নিশ্চয়ই স্যুট পরব—হয়তো আপনার মতো, হয়তো আরও ভালো কিছু, অথবা সস্তা কিছু।” এর আগেও জেলেনস্কিকে স্যুট ছাড়া দেখা গেছে, বিশেষ করে যখন তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পূর্বপরিকল্পিত বিতর্কের শিকার জেলেনস্কি?
সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা স্কট রিটারের মতে, হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বাগ্বিতণ্ডা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তার দাবি, এটি ছিল জেলেনস্কিকে জনসম্মুখে অপমান করার একটি কৌশল, যা তাকে দুর্বল করে তুলতে ও ক্ষমতা থেকে সরানোর পরিকল্পনার অংশ।
রিটার বলেন, “এই বৈঠকে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হতে চলেছে, যা তার ক্ষমতা হারানোর পথ আরও প্রশস্ত করবে।”
রিটারের মতে, ওভাল অফিসে ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল জেলেনস্কিকে চাপে ফেলার একটি রাজনৈতিক কৌশল। ইতিমধ্যে এক মার্কিন সিনেটর তার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। তবে জেলেনস্কি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কেবল ইউক্রেনের জনগণ চাইলে তবেই তিনি পদ ছাড়বেন।
২০১৯ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া জেলেনস্কির মেয়াদ গত বছরের মে মাসে শেষ হয়েছে। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ইউক্রেনে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে এবং সামরিক আইন বলবৎ রয়েছে।
স্কট রিটারের ভাষ্যমতে, ওয়াশিংটন জেলেনস্কির ওপর বিরক্ত। ওভাল অফিসের বৈঠকের কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প তাকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ওভাল অফিসের এই ঘটনাপ্রবাহের ফলে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সম্পর্ক একরকম ভেঙে গেছে। এর বিপরীতে, শান্তি প্রচেষ্টায় কিছু মতবিরোধ থাকলেও রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা বেড়েছে। রিটার আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলেন জেলেনস্কি। তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো এই চুক্তির জন্য অপরিহার্য ছিল। এ কারণেই এই বিতর্ক সাজানো হয়।
পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন অব্যাহত
এদিকে, নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চান এবং এজন্য প্রয়োজনে মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত বাতিল করতেও রাজি আছেন। এমনকি ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়েও নিজের অবস্থান বদলাতে পারেন তিনি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বদলালেও ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শুক্রবারের ঘটনার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে জেলেনস্কির প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
এছাড়া, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা খাত উন্নয়নে ২২৬ বিলিয়ন পাউন্ড ঋণ দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি করেছে। ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে সংহতি আরও সুদৃঢ় করতে ২ মার্চ লন্ডনে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বিতর্ক শুধুই তাৎক্ষণিক ঘটনা নয়, বরং এটি গভীর রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এটি যেমন ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে, তেমনই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?