মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক গণবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ও সংগঠিত প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
‘হ্যান্ডস অফ’ শীর্ষক এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আওতায় শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে একযোগে আয়োজিত হয় প্রায় ১,২০০টি বিক্ষোভ ও সমাবেশ। মূলত নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি চাকরিতে ব্যাপক ছাঁটাই এবং মাস্কের নেতৃত্বে গঠিত নতুন বিভাগ ডিওজিই (Department of Government Efficiency)-এর বিতর্কিত নীতির বিরুদ্ধেই এই গণআন্দোলনের সূত্রপাত।
ওয়াশিংটন ডিসিতে মেঘলা আকাশ ও হালকা বৃষ্টির মধ্যেও হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। রাজধানীর কানেটিকাট অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভকারীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়, যারা ন্যাশনাল মলে আয়োজিত কেন্দ্রীয় সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। আয়োজকদের মতে, সেখানে ২০ হাজারের বেশি লোকের উপস্থিতি ছিল।
বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড—‘যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রাজা নেই’, ‘মাস্ককে বিতাড়িত করুন’, ‘আমরা জনগণ’ ইত্যাদি। সংগঠন ‘ইনডিভিজিবল’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বলেন, “এই বিক্ষোভের মাধ্যমে আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই—গণতন্ত্রের ওপর হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না।”
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্প ইলন মাস্ককে ‘ডিওজিই’ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় ২ লাখ কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়, যা ২৩ লাখ কর্মীর একটি বিশাল অংশ। বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসন এই ছাঁটাইয়ের বড় লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে।
মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে এই সংস্থার কার্যালয়ের সামনে শত শত বিক্ষোভকারী অবস্থান নেন। সেখানে সম্প্রতি ৭ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা ঘিরে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এক বিক্ষোভকারী লিন্ডা ফ্যালকাও বলেন, “আমি আতঙ্কিত, আমি ক্ষুব্ধ। এই দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
ডেলাওয়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিনেসোটা, মিশিগান এবং নিউইয়র্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতেও বিক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এসব রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠন স্বাধীনভাবে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বার্লিন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, প্যারিস ও লন্ডনে একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ কর্মসূচি। ইউরোপীয় বিক্ষোভকারীরা মার্কিন অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির বিরোধিতা করে ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন’, ‘গণতন্ত্র রক্ষা করুন’ স্লোগান তোলেন।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই একাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, বিদেশি সহায়তা হ্রাস এবং ট্রান্সজেন্ডার অধিকার সংকুচিত করার মতো পদক্ষেপ, যেগুলোর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একাধিক অঙ্গরাজ্যে মামলা হয়েছে। কয়েকটি আদেশ ইতোমধ্যে আদালত স্থগিতও করেছেন।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?