সিঙ্গাপুরে বৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

গত দুই বছরে সিঙ্গাপুরে একাকিত্ব, উদ্বেগ এবং মানসিক চাপের মতো সমস্যার কারণে হেল্পলাইনে কল করা প্রবীণদের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। ২০২২ সালে চালু হওয়া ACES Care HelpLife হেল্পলাইন মূলত প্রবীণদের ছোটখাটো দৈনন্দিন সমস্যায় যেমন লাইট বাল্ব বদলানো, পানির লিক সারানো কিংবা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় সঙ্গী পাওয়ার মতো কাজে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যেই শুরু হয়। তবে হেল্পলাইন পরিচালনাকারী দাতব্য সংস্থাটি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত কারণে কল আসার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

ACES Care এর পরিচালক লো উই হিয়াঙ বলেন, অনেক প্রবীণই নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেন। এতে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন, হতাশায় ভোগেন এবং অনেক সময় আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। আমরা দেখেছি, অনেকের শুধু একজন শ্রোতার প্রয়োজন হয়।

হেল্পলাইনের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাথমিক পরামর্শদানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা সহানুভূতির সঙ্গে প্রবীণদের কথা শোনেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গুরুতর ক্ষেত্রে, যেমন আত্মহত্যার ইঙ্গিত পাওয়া গেলে, কলকারীদের Samaritans of Singapore Care Corner ev Counselling Hotline এর মতো পেশাদার পরামর্শক সংস্থাগুলোর কাছে রেফার করা হয়।

লো উই হিয়াঙ জানান, আমাদের টিম প্রতিটি কেস গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং যতক্ষণ না প্রবীণ ব্যক্তি প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছেন, ততক্ষণ আমরা ফলোআপ চালিয়ে যাই।

২০২৩ সালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত হওয়া আজিজাহ আবদুল রহিম জানান, সম্প্রতি তিনি এমন এক প্রবীণ নারীর সঙ্গে কথা বলেন যিনি নিজেও অসুস্থ, আবার অসুস্থ বাবা-মায়ের দেখাশোনাও করছেন। চিকিৎসায় নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য তার ছিল না। আজিজাহ তাকে AIC (Agency for Integrated Care)-এর সহায়তা নিতে পরামর্শ দেন। তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন জেনে যে, কোথাও তিনি ভরসা করতে পারেন। প্রবীণদের অনেক সময় শুধু একজন শ্রোতার দরকার হয়। কেউ কেউ পরিবারিক সমস্যায় ভোগেন, কিন্তু কোথা থেকে সহায়তা পাবেন জানেন না।

২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত হেল্পলাইনে মোট ৭,১৪৪টি কল এসেছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ২,২৬৮টি ও ২০২৪ সালে ২,৪১৫টি কল রেকর্ড করা হয়।

ACES Care প্রাথমিকভাবে অঙ মো কিও এলাকায় কার্যক্রম সীমিত থাকলেও ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে তা ট্যাম্পানিজ এলাকাতেও সম্প্রসারিত হয়। এই হেল্পলাইনটি পরিচালনা করছেন প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবকরাই। তারা নিজেরাও প্রবীণ হওয়ায়, কলকারীদের সমস্যার প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখাতে পারেন। ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২০০-এর বেশি প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিবন্ধন করেছেন, যাদের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৫০ জন সক্রিয়।

প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবককে ল্যাপটপ ও হেডসেট ব্যবহারের প্রশিক্ষণ, প্রবীণদের প্রয়োজন বোঝা, প্রতারণা চিহ্নিতকরণ এবং প্রাথমিক পরামর্শদানের কৌশল শেখানো হয়। তারা প্রতিদিন তিন ঘণ্টার শিফটে কাজ করেন এবং ঘণ্টা প্রতি ৫ সিঙ্গাপুর ডলার পারিশ্রমিক পান। 

এই উদ্যোগের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর প্রবীণ নাগরিকদের সামাজিক সংযুক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।

হেল্পলাইন প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে, এবং সরকারি ছুটির দিনগুলো বন্ধ থাকে।