clock ,

শিবির নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের পোস্ট ভাইরাল

শিবির নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের পোস্ট ভাইরাল

ইতিহাস পরিবর্তনের নোংরা খেলায় শিবির কেন মাতলো- এমন প্রশ্ন তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দফার ঘোষক আব্দুল কাদের। সোমবার  (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্টটি দেওয়ার পর মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। আব্দুল কাদেরের স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো

দফা দেওয়ার সময় শিবিরের তৎকালীন ঢাবি সেক্রেটারির সঙ্গে ঘণ্টা দুয়েকের মতো আলাপ-আলোচনা হয়, অনেক বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক শেষে ফাইনাল করা হয় এবং ওই দিন রাত ১২টা পর্যন্ত সব সাংবাদিককে আমি মেসেজ করে, ফোন দিয়ে দফা পৌঁছে দিছি। আমার কাছে ক্যাম্পাসের সব সাংবাদিকের নাম্বার ছিল, সবার কাছে পৌঁছে দিছি।

ইন্টারনেট ডাউন করে দেওয়ার কারণে সিম থেকেও মেসেজ ডেলিভারি হতো না, এক দফা, এক দফা করে পাঠিয়েছি। ফোন দিয়ে আমি মুখে দফাগুলো বলেছি, সাংবাদিকরা লিখে নিয়েছেন, রেকর্ড করে নিয়েছেন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নাম্বার আমার কাছে ছিল না, ওরা আমাকে নাম্বার পাঠাইছে, আমি এক এক করে সবাইকে মেসেজ দিয়েছি। তারপর ফোন দিয়ে কনফার্ম করছি, এটা যে আমি আব্দুল কাদের। তখন স্বাভাবিকভাবেই চাপ ছিল, আর সাংবাদিকরা তো কনফার্ম না হওয়া ছাড়া কোনোকিছু ছাপাবে না। 

তাই প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা বাসা থেকে বের হয়ে দূরবর্তী স্থানে গিয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া নাম্বার অন করতাম, সবাইকে কর্মসূচি পাঠাতাম, এভাবে চলতে থাকতো রাত ১১-১২টা পর্যন্ত। এটা শুরুর দিকের কথা। 

কর্মসূচি আলাপ আলোচনা করেই ঠিক হইতো। সাদিক ভাই আমাকে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের কন্টাক্ট নাম্বার দিতেন, তাদেরকে আমি ফোন দিয়ে রিকুয়েস্ট করতাম, দফাটা আমার পক্ষ থেকে যাচ্ছে, আমি আব্দুল কাদের, আপনারা এটা নিয়ে একটু লেখেন...

ক্যাম্পাসসহ সব মিডিয়া প্রতিনিধিরা জানেন দফার বিস্তারিত। প্রচারের ক্ষেত্রে শিবিরের অবশ্যই অবদান আছে, সেটা অস্বীকার করি নাই। কিন্তু এইভাবে পুরা ইতিহাস পরিবর্তনের নোংরা খেলায় শিবির মাতলো কেন? আবু সাঈদসহ জন শহিদ হওয়ার পর ১৬ জুলাই রাতে আমরা অনলাইন মিটিং করে উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে সামনের পরিকল্পনা ঠিক করি, একই সঙ্গে সরকারের সংলাপের আহবানের প্রেক্ষিতে কিছু দাবি-দাওয়া ঠিক করি। কিন্তু বিরূপ পরিস্থিতির কারণে সেগুলা ফরমালি উপস্থাপন করা হয়নি। যখনই সিনিয়র কারো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না, পরিস্থিতি বেগতিক, শিবিরের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, আমি আমাদের পূর্বের সেই রাতের দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে ফরমালি কিছু দাবি দিতে সম্মত হই। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছেন সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। তার বাম পাশে রয়েছেন বর্তমান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গত ১২ জুলাই এই ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন-‘বাধা দিলে বাধবে লড়াই, এই লড়াইয়ে জিততে হবে

শিবির প্রথম দফা দাবি দিয়েছিল, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। আমি ওই পরিস্থিতি এবং সময়ের আলোকে সেটাকে সুইটেবল মনে করি নাই। এভাবে সরাসরি ছাত্রদের পক্ষ থেকে পদত্যাগের দাবি ওই সময়ে উঠা সমীচীন মনে হয়নি আমার কাছে। কিন্ত শিবির নিজেদের অবস্থানে অনড়। একইভাবে আমিও। পরবর্তী আলাপ আলোচনা শেষে পরিবর্তিত  রূপ আসে। শিবির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি দিয়েছিল, আমি শক্তভাবে অপোজ করেছি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে কাদের লাভ, সেটা তো আমি জানি। তারা দাবিতেও গোঁ ধরে ছিলেন। পরে আমার শক্ত অবস্থানের প্রেক্ষিতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আসে। এই দুটাই তো মেইন। বাকি দাবিগুলা কমন দাবি ছিল সবার, অনলাইনেও মানুষজন লেখালেখি করেছিল এমন দাবি নিয়ে।

আগস্টের কিছুদিন পর ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক ভাই আমাকে গভীর রাতে অনেকবার ফোন দিলেন, দেখা করতেই হবে। ভোরের দিকে দেখা করলাম ভিসি চত্বরে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ হলো। একটাই কথা তার- তাদের সম্পর্কে আমি যেন কিছু লিখি। তারা ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। কোথাও এক্সেস পাচ্ছেন না। আমি না লিখলে হবে না। 

আমি লিখলাম, ইতিহাসের কাছে আমি দায়বদ্ধ থাকতে চাই না, কারো অবদানকে অস্বীকার করলে আমি ইহকাল এবং পরকালে দায়ী থাকবো। যেহেতু আমি অনেক কিছু জানি, অনেককিছুর অংশ ছিলাম, আল্লাহ সুযোগ করে দিয়েছেন। জাগতিক পাওয়া না পাওয়া ঊর্ধ্বে গিয়ে অনেকেনাকরা সত্ত্বেও লিখলাম। আমার লেখার পর শিবিরের আলাপ সামনে আসে। শিবির বিভিন্ন জায়গায় দর কষাকষির সুযোগ পায়। কিন্তু বিনিময়ে শিবির কী করলো? আমাকে কখন কোথায় নাশতা খাওয়াইছে, কখন গেঞ্জি কিনে দিয়েছে- সেটা প্রচার করতে লাগলো। দফা নিয়ে তারা পুরা ইতিহাস- চেঞ্জ করে দিলো

শেখ হাসিনার পতন না হলে আমি আব্দুল কাদেরের কল্লা যেতো, শিবিরের সাদিক-ফরহাদসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডার দাবিদারদের কিছুই হতো না। কারণ, তারা তো সবাই অদৃশ্য, আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বেরই হতো না, ইভেন ফেসবুকেও একটা অক্ষর লিখে নাই। বলী হলে আমি হতাম। হাসিনা জনকে পদ্মায় ডেকে নিয়ে দফা দিয়ে আন্দোলন নস্যাৎ করার ছক পুরোপুরি ফাইনাল করে ফেলছিল, সেই পরিস্থিতিতে দফা দিয়ে হাসিনার পুরো গেমপ্ল্যান ভেঙে দিলাম। আসিফ ভাই দুবার ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়েছেন, ছাড়া পাওয়া মাত্রই আমাকে ফোন দিয়েছেন, বারবার করে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, সাবধানে থাকতে, আমাকে পেলেই মেরে ফেলবে। 

জীবন বাজি রেখে সাত-পাঁচ না ভেবে আন্দোলনের ক্রুসিয়াল মোমেন্টে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলাম, আর এখন এসব দেখা লাগতেছে!”

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য