ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কি বার্সেলোনার মতোই আর্থিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্লাবটি আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয় করেছে, পাশাপাশি ঋণের চড়া সুদও পরিশোধ করতে হচ্ছে। মাঠের পারফরম্যান্সও পড়তির দিকে, চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে না পারায় আয়ের বড় অংশ কমে গেছে। সব মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগের ‘প্রফিট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি রুলস’ মেনে ক্লাব পরিচালনা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই সংকট সামাল দিতে ক্লাবের সহ-মালিক ও ইনেওস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জিম র্যাটক্লিফ একের পর এক কঠোর আর অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আজীবন ইউনাইটেড-সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও, তাঁর এসব পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সমর্থকগোষ্ঠী, যারা প্রতিবাদে ব্যানারও উঁচিয়ে ধরেছে।
এর মধ্যেই বিবিসিকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে র্যাটক্লিফ ক্লাবের আর্থিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের পকেট থেকে প্রায় ৩০ কোটি পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৭০০ কোটি টাকা) ঢালার পরও তিনি দেখছেন, ক্লাবের নগদ অর্থ প্রায় শেষ!
“ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে যদি ব্যবসা হিসেবে ভাবেন, তাহলে বলতে হবে, ক্লাবটি গভীর সংকটে রয়েছে, এবং এটা অনেক দিন ধরেই চলছিল। অর্থনৈতিক হিসাবের দিকে তাকালে ভয়ংকর এক চিত্র দেখা যায়। খরচ লাগামছাড়া, আর কেউ যেন এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।” – বলেছেন র্যাটক্লিফ।
তিনি জানান, গত সাত বছর ধরে ক্লাব যে আয় করেছে, তার চেয়ে বেশি খরচ করেছে। এর ফলে আজ ইউনাইটেডের এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থা। এমনভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ক্লাবের হাতে কোনো নগদ অর্থই থাকবে না বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাটক্লিফ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে ‘পরামর্শক’ হিসেবে বছরে যে ২০ লাখ পাউন্ড দেওয়া হতো, সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে র্যাটক্লিফ জানান, ফার্গুসনকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর তিনি নিজেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
এছাড়াও, খরচ কমানোর অংশ হিসেবে ক্লাবের অনেক কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে এবং টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন র্যাটক্লিফ।
সাক্ষাৎকারে র্যাটক্লিফ গত কয়েক বছরে দলবদলের ব্যর্থ নীতির কথাও উল্লেখ করেছেন। তার মতে, “অনেক খেলোয়াড় ইউনাইটেডে খেলার যোগ্য নন, অথচ তাদের দলে টানতে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।”
তবে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার দায় র্যাটক্লিফেরও কিছুটা রয়েছে। সাবেক কোচ এরিক টেন হাগের চুক্তি বাড়ানোর পর মাত্র তিন মাসের মাথায় তাঁকে ছাঁটাই করতে হয়েছে, যার ক্ষতিপূরণ বাবদ ইউনাইটেডকে গুনতে হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড। এরপর নতুন কোচ রুবেন আমোরিমকে আনতে স্পোর্তিং সিপিকে দিতে হয়েছে ১ কোটি পাউন্ড। পাশাপাশি মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে স্পোর্টিং ডিরেক্টর ড্যান অ্যাশওয়ার্থকে বরখাস্ত করতে হয়েছে, যার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে ৪০ লাখ পাউন্ডের বেশি।
এই সিদ্ধান্তগুলোর কিছু ভুল ছিল বলে স্বীকার করেছেন র্যাটক্লিফ। তবে নতুন কোচ আমোরিমের পারফরম্যান্সে তিনি সন্তুষ্ট এবং রাশফোর্ড-আন্তনিদের ধারে পাঠানোর সিদ্ধান্তকেও তিনি সমর্থন করেছেন।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সামনে এখন কঠিন সময়। সংকট সামাল দিতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হতে পারে র্যাটক্লিফকে, যা হয়তো আরও বেশি সমালোচনা ডেকে আনবে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?