clock ,

প্যারিসে সাংবাদিকের বন্যা, প্রবাসী যেন বিলুপ্ত প্রাণী!

প্যারিসে সাংবাদিকের বন্যা, প্রবাসী যেন বিলুপ্ত প্রাণী!

প্যারিস শহরটি যেন সাংবাদিক উৎপাদনের নতুন হাব। যেখানে ঢাকার গুলিস্তানের গলিতে মোবাইল শো-রুম, প্যারিসের অলিতে গলিতে সাংবাদিক সংগঠন। কেউ কানে মাইক্রোফোন ঝুলালেই ঘোষণা করেন, "আমি সাংবাদিক, এবং হ্যাঁ, আমার একটা সংগঠন আছেআমিই সভাপতি, আর বাকি দুইজন সাধারণ সদস্য, মানে ফলোয়ার!" 

যে হারে এখানে সাংবাদিক সংগঠন গজাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে হয়তো ফ্রান্সেও প্রেস ক্লাব ভিত্তিক ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচন শুরু হবে। তবে দল-মত-নেতা-ভাই সব ঠিক থাকলেও নীতি, আদর্শ আর পেশাদারিত্বএই তিনটি শব্দ এখন কেবল অভিধানে টিকে আছে।

যেখানে অন্য দেশের প্রবাসীরা কাজ আর অবদানের গর্বে দেশকে আলোকিত করেন, সেখানে প্যারিসের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সাংবাদিকতা এখন এক অভিনবখেলা হ্যাঁ, খেলাযেখানে মূল প্রতিযোগিতা কে কত দ্রুত সংগঠন বানাতে পারে, কে কত বড় নেতা হতে পারে, আর কে কতটা তেল দিতে পারে।

সংগঠনের হুমড়ি খাওয়া: তিনজনে সংগঠন, একজনেই প্রেসিডেন্ট! প্যারিসে সাংবাদিকদের হার এখন এমন পর্যায়ে, যেখানে সাধারণ প্রবাসীর সংখ্যা সাংবাদিকদের তুলনায় কমে এসেছে। ঢাকার রাজনৈতিক জেলাভিত্তিক সংগঠনগুলোর তুলনায় প্যারিসে সাংবাদিক সংগঠন চার গুণ বেশিহ্যাঁ, ভুল পড়েননি, চার গুণ!

"দুইজন মিললে সংগঠন, তিনজন হলে ফেডারেশন, আর একজন থাকলেও প্রেস ক্লাব খুলে ফেলেন,"—এটাই যেন এখনকার ট্রেন্ড প্যারিস। তাদের দল ভারী করার জন্য কৌশলটা প্রশংসনীয় সোজা: সাধারণ প্রবাসীদের ধরে ধরে বলা হয়, "ভাই আপনি এখন থেকে সাংবাদিক, এই নিন কার্ড। কাল একটা ছবি তুলে রিপোর্ট লিখে দিয়েন!"

সংগঠন মানেই প্রতিপক্ষ গালি প্রকল্প! দুইটি আলাদা সংগঠনের সাংবাদিক যদি কোনো অনুষ্ঠানে একসাথে পড়েন, তাহলে সে দৃশ্য আক্ষরিক অর্থেআসমান থেকে চাঁদ পড়ারমতো বিরল ঘটনা। দেখা হলেই শুরু হয় পরস্পরকে নিয়ে বিদ্রূপ, কটাক্ষ, আর গোপনে গালির আদান-প্রদান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবাসী  বলেন,"ওরা তো কেবল তেল দিয়া নেতা বানায়।" আরেকজন বলেন, "আমরাও তাই করি, কিন্তু আমাদের তেল একটু উন্নত মানের!"

নীতি আদর্শ? ওটা খেয়ে ফেলেছে ফ্রেঞ্চ ব্যাগুয়েট! সাংবাদিকতার নীতি, আদর্শ বা পেশাদারিত্বএসব শব্দ এখন কেবল ডিকশনারির পাতায়। তেলবাজি, ছবি তোলা, ফেসবুকে স্ট্যাটাস আর প্রোগ্রামে বড় গলার বক্তৃতাই এখন সাংবাদিকতার প্রধান উপাদান। অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করতে আসেন না কেউ। বরং প্রশ্নকর্তা যেন বেমানানযেন কাঁটা দিয়ে পায়েস খাওয়ার চেষ্টা!

প্যারিস সাংবাদিকতা: এক আধুনিক প্রবাসী নাট্যকলার মঞ্চ! প্যারিসে এখন সাংবাদিকতা একরকম "ড্রামা সিরিজ"—নিয়মিত পর্ব চলে, যেখানে: কেউ নতুন সংগঠন খুলে ফেলে, কেউ পুরাতন সংগঠন থেকে বের হয়ে ঘোষণা দেন, “আমি নতুন পথের পথিক”, আবার কেউ প্রেস কার্ড ছাপিয়ে বিয়ে বাড়িতে রিপোর্ট করতে চলে যান।

সাধারণ প্রবাসী জনগণ এক বাক্যে বলেন,“এইসব সাংবাদিকতা দেখে হাসি চাপতে পারি না ভাই! সাংবাদিক মানে এখন ফটোশুট আর ফেক নিউজ!"

প্যারিসের সাংবাদিক সমাজের এই চিত্র যেন এক প্রবাসী কমেডি নাটকের দৃশ্য। সত্যিকার অর্থে যারা সাংবাদিকতা করতে এসেছেন, তাদের জন্য বেদনার হলেওবাকি সবার কাছে এটি নিছক এক প্রহসন। "সংগঠন খেলি, নেতা হই, তেল দিই"—এই ফর্মুলা এখন প্যারিস সাংবাদিকতার নিউ নরমাল।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য