ন্যাশনাল ব্যাংকের ৯১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ: দুদকের চার মামলা অনুমোদন

অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান, জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণের নামে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৯১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চারটি মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল দুদকের মহাপরিচালক আকতার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বকেয়া স্থিতিসহ বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। মামলায় দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ, উপপরিচালক জিএম আহসানুল কবীর, সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান এবং উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শামীম খন্দকার এই অনুসন্ধান পরিচালনা করেছেন।

দুদক জানিয়েছে, ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, সিকদার পরিবার ও দেশ টেলিভিশনের এমডি আরিফ হাসান যোগসাজশ করে দেশ টেলিভিশনের কয়েকজন কর্মচারীর নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করেন। ব্যাংকিং নীতিমালা উপেক্ষা করে ব্যাংকের কিছু অসৎ কর্মকর্তার সহযোগিতায় অবৈধভাবে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও উত্তোলন করে তা অন্য খাতে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করা হয়। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনাদায়ে সুদ ও অন্যান্য চার্জসহ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৭৮ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার টাকা। এ ঘটনায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

একইভাবে, মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে উত্তোলন করা হয়। সুদ ও আসলসহ মোট আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮৩ কোটি ১৩ লাখ ৩ হাজার টাকা। এ ঘটনায় ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

প্রকৃতি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের নামে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখা থেকে ৮০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত অনাদায়ী সুদ বাবদ ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ ঘটনায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দ্য ভিউ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংকের কুয়াকাটা শাখা থেকে ৪০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে উত্তোলন করা হয়। সুদ ও আসলসহ মোট আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ ৬১ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুদক এসব ঘটনায় তদন্ত চালিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।