clock ,

রেমিট্যান্সের বাজারে অলিগোপলি

রেমিট্যান্সের বাজারে অলিগোপলি

বর্তমানে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস হিসেবে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। চলতি অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ২৪৯.৫৩ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২২% বেশি। তবে এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীরা এখনো জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ আসলে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে পাঠানো হচ্ছে। মার্কিন বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাগ্রিগেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে এসব অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবে দেখানো হচ্ছে।

এভাবে অ্যাগ্রিগেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণের ফলে রেমিট্যান্সের বাজার প্রতিযোগিতামূলক না থেকে অলিগোপলির রূপ নিয়েছে। অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাজার নিয়ন্ত্রণ করায় তারা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে, যা ক্ষুদ্র প্রতিযোগীদের জন্য অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্সের বাজারে মাস্টারকার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালে ট্রান্সফার্স্ট অধিগ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটি রেমিট্যান্সের বাজারে দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে মাস্টারকার্ড বিশ্বের ২১০টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বাজারেও তাদের অংশীদারত্ব ক্রমশ বাড়ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের অঙ্কও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৭৭.৫৯ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭.% বেশি। তবে গড় প্রবৃদ্ধির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। সৌদি আরব, যেখানে বাংলাদেশী শ্রমশক্তির সবচেয়ে বড় অংশ কাজ করে, সেখানে রেমিট্যান্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৭২ কোটি ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেমে এসেছে ২৭৪ কোটি ডলারে।

রেমিট্যান্সের বাজারে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। মাস্টারকার্ড অন্যান্য অ্যাগ্রিগেটররা বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায় এবং দরকষাকষি করে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কাছে বেশি মূল্যে বিক্রি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার ১২২ টাকা নির্ধারণ করলেও অ্যাগ্রিগেটররা উচ্চমূল্যে ডলার বিক্রি করে ব্যাংকগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

ডলারের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি মাস্টারকার্ড থেকে রেমিট্যান্স কেনা বন্ধ রাখতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে রেমিট্যান্স হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাহিত হতে পারে।

রেমিট্যান্সের উৎস নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। মার্কিন আরব আমিরাতভিত্তিক অ্যাগ্রিগেটরদের আধিপত্য কমাতে স্থানীয় মানি এক্সচেঞ্জ ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে যথাযথ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য