ভারত ও চীনের মধ্যে পানি নিয়ে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের উত্তাপ বাড়লেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর।
গত মাসে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে সিয়াং নদীর তীরে শতাধিক আন্দোলনকারী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। তারা বলছে, সিয়াং নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ তাদের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে। স্থানীয় কৃষিজীবী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা এই নদীর ওপর নির্ভরশীল, যা ভারত সরকারের প্রস্তাবিত ১৩.২ বিলিয়ন ডলারের ‘সিয়াং আপার মাল্টিপারপাস প্রজেক্ট’-এর কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য ১১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং একটি ৯ বিলিয়ন ঘনমিটার ধারণক্ষম জলাধার তৈরি করা। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অন্তত ২০টি গ্রাম পুরোপুরি এবং ২০টি গ্রাম আংশিকভাবে পানির নিচে চলে যাবে। ফলে হাজার হাজার বাসিন্দা গৃহহীন হয়ে পড়বে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন প্যারামিলিটারি বাহিনী মোতায়েন করেছে। কিন্তু স্থানীয়রা হাল ছাড়তে নারাজ।
এদিকে, চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে, যা মেদোগ অঞ্চলে ইয়ারলুং ঝাংবো নদীর ওপর তৈরি হবে। এর মাধ্যমে চীন পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগত সুবিধা লাভ করবে।
এই বাঁধটি ১৩৭ বিলিয়ন ডলারে নির্মিত হবে এবং বছরে ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। তবে প্রকল্পের কারণে চীনে কতজন বাস্তুচ্যুত হবে, তা স্পষ্ট নয়।
বাংলাদেশের
জন্য আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন ও ভারতের
বাঁধ নির্মাণের প্রভাব সবচেয়ে মারাত্মক হবে বাংলাদেশের জন্য।
ব্রহ্মপুত্র নদী বাংলাদেশের পানি
চাহিদার ৬৫ শতাংশেরও বেশি
মেটায়। বাঁধ নির্মাণের কারণে
পানি প্রবাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে লাখো
মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে, নদীভাঙন বাড়বে,
এবং বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ঢাকাভিত্তিক সংগঠন রিভারিন পিপলের সাধারণ সম্পাদক শেখ রোকন বলেন, “চীন ও ভারতের ‘বাঁধের বদলে বাঁধ’ প্রতিযোগিতার প্রভাব আমাদের ওপর সবচেয়ে বেশি পড়বে। আমাদের এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনায় অংশ নিতে হবে।”
চীন এবং ভারতের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতি এই সংকটকে আরও তীব্র করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান সতর্ক করে বলেছেন, “ভারত ও চীনের উত্তেজনা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের জীবনরেখা ব্রহ্মপুত্র নদীর ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে।”
বাংলাদেশকে এখনই কৌশলগত এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?