চট্টগ্রাম শহরের খাল ও নালার দুর্বল ব্যবস্থাপনা কেড়ে নিল একটি নিষ্পাপ প্রাণ মাত্র ছয় মাস বয়সী শিশু সেহলিজ। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় নবাব হোটেলের পাশে খোলা নালায় পড়ে শিশুটি নিখোঁজ হয়।
সেহলিজের মা সালমা বেগম জানান, তারা এক আত্মীয়ের বাসা থেকে অটোরিকশায় ফেরার সময় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। তিনি ও শিশুটির দাদি কোনও রকমে বেঁচে গেলেও পানির স্রোতে তলিয়ে যায় সেহলিজ। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শিশুটির জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পের অংশ হিসেবে নালার পাশের নিরাপত্তাবেষ্টনী খোলা ছিল। সেই সুযোগেই ঘটে দুর্ঘটনাটি। ঘটনার পরপরই অটোরিকশাচালক পালিয়ে যান।
ফায়ার সার্ভিসের চন্দনপুরা ইউনিট, সিভিল ডিফেন্স এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে রাতভর উদ্ধার তৎপরতা চালালেও গভীর রাত পর্যন্ত শিশুটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, দুর্ঘটনার স্থানে পরিচিত ‘হিজড়া খাল’-এ প্রচুর আবর্জনা জমে থাকার কারণে পানির প্রবাহ আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
৪ বছরে ঝরলো ৬ প্রাণ
চট্টগ্রামে নালা-খালে পড়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা নতুন নয়। গত চার বছরে অন্তত ছয়টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের জুনে গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় সাত বছর বয়সী সাইদুল ইসলাম নিখোঁজ হয়; পরদিন তার মরদেহ মেলে নাছির খালে। ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট দেড় বছর বয়সী ইয়াছিন আরাফাত আগ্রাবাদে নালায় পড়ে ১৬ ঘণ্টা পর মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়। ২০২২ সালে ষোলশহরে শিশু কামাল নিখোঁজ হয়; তিন দিন পর মুরাদপুর থেকে তার মরদেহ মেলে। ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, আগ্রাবাদে হাঁটার সময় নালায় পড়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া। ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট মুরাদপুরে খোলা নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ; তার মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি।
বারবার প্রাণহানি সত্ত্বেও নালার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ। নগরবাসী এখন জানতে চায়—কবে শেষ হবে এই মৃত্যুর মিছিল?
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?