রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার যুবক আকরাম হোসেন (২৬)। তিনি উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা। আকরামের মৃত্যুর খবর গ্রামের প্রত্যন্ত জনপদে পৌঁছাতেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দীর্ঘদিনের আর্থিক অনটনের কারণে পরিবারকে সচ্ছল করতে ওয়েল্ডার হিসেবে রাশিয়ায় পাড়ি জমান আকরাম। বাবা মোরশেদ মিয়ার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দালালের মাধ্যমে প্রায় আট মাস আগে রাশিয়া যান তিনি। এতে খরচ হয় ছয় লাখ টাকারও বেশি। সেখানে এক চীনা কোম্পানিতে কাজ করে পরিবারের জন্য প্রতি মাসে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পাঠাতেন।
প্রবাসজীবনের কয়েক মাস পর অধিক আয়ের আশায় আকরাম রাশিয়ান এক দালালের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক সেনা হিসেবে দেশটির বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি রাশিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার পর প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধে অংশ নেন বলে জানিয়েছেন লালপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন।
আকরামের বাবা বলেন, “সে জানিয়েছিল, রাশিয়ায় ব্যাংকে তার প্রায় ৪ লাখ টাকা জমা হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর লোকদের কথা না শুনলে তাকে মারধর করা হতো।”
গত রোববার ছিল আকরামের সঙ্গে পরিবারের শেষ কথা। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি ভালো নয়। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) মাগরিবের নামাজের পর এক অচেনা নম্বর থেকে ফোনে জানানো হয়—আকরাম ইউক্রেনের হামলায় নিহত হয়েছেন।
আকরামের মা মোবিনা বেগম জানান, ১৩ এপ্রিলের পর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। আকরামের মরদেহ দেশে ফেরত আনতে সরকারের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন তার পরিবার।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া জানিয়েছেন, ঘটনার খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুতের পর মরদেহ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আকরামের ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারের ক্ষতি নয়, বরং অভিবাসন ও দালালচক্রের ভয়াবহ বাস্তবতা ও তরুণদের ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বেছে নেওয়ার করুণ পরিণতির এক জ্বলন্ত উদাহরণ।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?