clock ,

ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে বিপাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দুশ্চিন্তায় চীনের প্রতিবেশীরা

ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে বিপাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দুশ্চিন্তায় চীনের প্রতিবেশীরা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এখন এক কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। চীনের ওপর ধারাবাহিকভাবে শুল্ক আরোপের ফলে অঞ্চলটির ব্যবসা-বাণিজ্যে অসন্তুলন সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে চীন, যা তাদের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যা তাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজারএই দুই পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় উৎপাদক বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।

এই টানাপোড়েনের মাঝেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং কম্বোডিয়া সফর করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, সফর এই অঞ্চলের উপর চীনের কৌশলগত প্রভাব বজায় রাখতে এবং শুল্কবিষয়ক জটিলতার প্রেক্ষাপটে মিত্রতা জোরদার করতেই করা হয়েছে।

চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ফলে অনেক চীনা কোম্পানি বিকল্প বাজার খুঁজছে। ফলে তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে তাদের পণ্য সরবরাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কম দামে পণ্য সরবরাহের এই প্রতিযোগিতায় চীনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসাগুলো। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড ইন্দোনেশিয়ার শত শত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ এখন সুরক্ষামূলক বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করতে শুরু করেছে।

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন চীনা মালবাহী জাহাজে অতিরিক্ত পোর্ট ফি আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, চীনে তৈরি প্রতিটি জাহাজ আমেরিকার প্রতিটি বন্দরে ভিড়লে ১৫ লাখ ডলার পর্যন্ত ফি দিতে হতে পারে। এই পোর্ট ফি ধাপে ধাপে বাড়ানো হবে আগামী তিন বছরের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজ দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং চীনের এই খাতে প্রভাব প্রতিহত করা।

এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধু চীন নয়, গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরবরাহ চেইন, রপ্তানি উৎপাদন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তবে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, শুল্ক বাড়ানোর প্রতিযোগিতা দীর্ঘদিন চলবে না। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "আমি চাই না শুল্ক আর বাড়ুক। এমন একটা সময় আসবে, যখন মানুষ জিনিসপত্র কেনাই বন্ধ করে দেবে।"

এদিন তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্ভাব্য শুল্ক চুক্তি নিয়েও আশাবাদ প্রকাশ করেন। হোয়াইট হাউসে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচক দিকে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর এই প্রথম কোনো ইউরোপীয় নেতা ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।

সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি বাণিজ্য যুদ্ধ শুধু চীন বা যুক্তরাষ্ট্র নয়বরং গোটা দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের অভিঘাত ফেলতে চলেছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য