clock ,

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৫০ হাজার ছাড়াল, ১৭ হাজার শিশু

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৫০ হাজার ছাড়াল, ১৭ হাজার শিশু

ইসরায়েলের লাগাতার নৃশংস হামলায় গাজার মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু শিশুই ১৭ হাজার। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ মাসের অবরোধ এবং হামলায় নিরীহ সাধারণ জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এত সংখ্যক শিশুর মৃত্যু এক প্রজন্মকে মুছে ফেলার শামিল।

আলজাজিরার এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এটি শুধু পরিসংখ্যান নয়, এটি এক ভয়ংকর দুঃখজনক বাস্তবতা। যারা স্বপ্ন দেখত, উচ্চাশা ছিল, জীবনে বড় কিছু করতে চাইত, তাদের আর কেউ নেই। তারা ধুলায় মিশে গেছে।

গাজা থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, বাস্তব মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেবল নথিভুক্ত হতাহতদের হিসাব রাখে। কিন্তু বাস্তবে এমন অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের নাম কোনো রেকর্ডেই নেই। অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা কেউ জানে না। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে চাপা পড়ে আছেন, যাদের উদ্ধারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।
গাজার ভয়াবহ গণহত্যার খবর সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো অনুশোচনা দেখা যাচ্ছে না। ইসরায়েলের রাজনৈতিক ভাষ্যকার ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ‘গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার অতিক্রম করলেও ইসরায়েলিদের মধ্যে এটি নিয়ে কোনো অনুশোচনা বা দুঃখ কাজ করবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ, হতভম্ব এবং গভীরভাবে দুঃখিত। কিন্তু ইসরায়েলের অধিকাংশ মানুষ এতে বিচলিত নয়। কারণ, শুরু থেকেই তারা হামাসের দেওয়া মৃতের পরিসংখ্যানকে ভুয়া বলে দাবি করে আসছে।
গোল্ডবার্গের মতে, ‘ইসরায়েলের জনগণ সাধারণভাবে ফিলিস্তিনি হতাহতের জন্য কোনো দায় নিতে চায় না। এমনকি গাজায় নিজেদের নাগরিকদের মৃত্যুর ক্ষেত্রেও তারা দায়িত্ব নিতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের টেলিভিশনে গাজার হত্যাযজ্ঞের ছবি প্রচার করা হয়। কিন্তু এই ঘটনা এত দীর্ঘ সময় ধরে চলছে যে, কিছুক্ষণ পর মন অসাড় হয়ে যায়।

গোল্ডবার্গ ব্যাখ্যা করেন, ‘যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলিরা দাবি করে আসছে যে, গাজায় নিহতের সবাই হামাসের সদস্য। এই দাবির মাধ্যমে তারা নিজেদের বিবেকের ভার লাঘব করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হাজার হাজার নিরপরাধ শিশু, নারী বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে, যা কোনোভাবেই ন্যায্যতা দেওয়া সম্ভব নয়।
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু ইসরায়েল তাতে কর্ণপাত করছে না।

বিশ্লেষকদের মতে, এতসংখ্যক শিশুর মৃত্যু কেবল মানবিক বিপর্যয় নয়, এটি রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিকভাবে গাজাকে ধ্বংস করে দেওয়ার এক ভয়ংকর পরিকল্পনার অংশ হতে পারে। গাজায় শিক্ষা, চিকিৎসা অর্থনীতির অবস্থা চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর যারা বেঁচে আছে, তারা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।

গাজার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ভেঙে পড়েছে। ওষুধ খাবারের সংকট চরমে পৌঁছেছে। এতে করে শিশুদের মৃত্যুহার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য