মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত উত্তেজনা আবারও চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একে অপরকে কঠোর হুমকি দিচ্ছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো পারমাণবিক চুক্তিতে না পৌঁছায়, তবে দেশটির ওপর সামরিক হামলা চালানো হবে। একই সঙ্গে, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করা দেশগুলোর বিরুদ্ধেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এনবিসি
নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প
বলেন, "যদি তারা কোনো
চুক্তি না করে, তাহলে
বোমাবর্ষণ হবে। এমন বোমাবর্ষণ
হবে, যা তারা আগে
কখনো দেখেনি।যদি তারা চুক্তি না
করে, তাহলে আমি আগের মতোই
তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ
করব।"
ট্রাম্পের এই হুমকির জবাবে
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী
খামেনি কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,"যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে হামলা
চালায়, তবে শক্তিশালী জবাব
দেওয়া হবে।"
ইরানের
প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও জানান,"আমরা পরোক্ষ আলোচনায়
আগ্রহী, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ করব না।"
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাঠানো চিঠির জবাবে তেহরান ওমানের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠিয়েছে,
যেখানে নতুন পারমাণবিক চুক্তির
বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে
ইরান সরাসরি আলোচনায় যেতে রাজি নয়।
ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, রাশিয়া
ও ইরানের পণ্যের ক্রেতাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ
করা হতে পারে। ভেনেজুয়েলার
তেল ক্রেতাদের ওপর ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা
আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে
আসছে যে, ইরান উচ্চমাত্রার
বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে পারমাণবিক অস্ত্র
তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও ইরান বরাবরই
দাবি করে আসছে যে,
তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ইরানের পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এবং
জানিয়েছে,"যেকোনো হুমকির জবাবে তেহরান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে।"
ইরানের
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন,"ইরানের বিরুদ্ধে বোমা হামলার হুমকি
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার পরিপন্থী।
সহিংসতা সহিংসতা ডেকে আনে, শান্তি
শান্তি সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত
নিতে হবে এবং তার
পরিণতি মেনে নিতে হবে।"
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ইরান
ও বিশ্বশক্তির মধ্যে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে ট্রাম্প তার
প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। ওই
চুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর কড়াকড়ি আরোপ
করা হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই
পদক্ষেপের পর থেকেই দুই
দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে আগামী দুই মাসের মধ্যে চুক্তিতে আসার জন্য চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে, ইরান সরাসরি আলোচনার পরিবর্তে পরোক্ষ আলোচনার পথেই থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এর মধ্যে ইরানের সামরিক বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্তেজনা যদি আরও বাড়তে থাকে, তবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন একটি সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?