ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকেই রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে হামলা: সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক কাছারিবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকেই ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শুক্রবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, এ ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য ছিল না এবং রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনের কোনো ক্ষতি হয়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনার পর জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং কাছারিবাড়ি দর্শনার্থীদের জন্য আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে এক দর্শনার্থীর হাতে প্রবেশ টোকেন তুলে দিয়ে এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, “কাছারিবাড়ি পুরোপুরি অক্ষত রয়েছে। হামলা হয়েছে মূলত কাছারিবাড়ির পাশে অবস্থিত রবীন্দ্র অডিটোরিয়ামে, সেটিও কোনোরূপ পরিকল্পিত হামলা নয়। একটি মোটরসাইকেল পার্কিংকে কেন্দ্র করে এক দর্শনার্থী ও কর্তব্যরত কর্মচারীর মধ্যে বিরোধ থেকেই এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।”

ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ কামাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তদন্ত ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন—জুবায়ের, আশিকুর রহমান, সজীব, রিমন, তানভীর, সারদুল, আব্দুস সালামসহ আরও কয়েকজন। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গত ৮ জুন মোটরসাইকেল পার্কিংকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে এক প্রবাসী দর্শনার্থী শাহনেওয়াজকে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ ওঠে কর্তব্যরত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ওই রাতেই শাহনেওয়াজ শাহজাদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে মঙ্গলবার স্থানীয়রা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে এবং উত্তেজিত জনতা কাছারিবাড়ির অডিটোরিয়ামে হামলা চালায়। এর জবাবে কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগে ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

এ ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, “এই ঘটনাকে আমরা অত্যন্ত নিন্দনীয় মনে করি। বাংলাদেশ সরকার যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেটি আমরা আশা করি।”

এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং এ বিষয়ে কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।