একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইংল্যান্ডে প্রতি ১০ জনে ১ জন মানুষ মনে করেন যে তারা দীর্ঘস্থায়ী কোভিড বা লং কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত এই গবেষণায় দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (NHS) এবং সাধারণ চিকিৎসকদের (GP) রোগীদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, ৪.৮% রোগী নিশ্চিতভাবে জানিয়েছেন যে তারা দীর্ঘস্থায়ী কোভিডে আক্রান্ত, আর ৯.১% মানুষ সন্দেহ করছেন যে তাদের এই রোগ থাকতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, মস্তিষ্কের বিভ্রান্তি (ব্রেইন ফগ), অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, এবং দৈনন্দিন কাজে দীর্ঘস্থায়ী অসুবিধা অন্তর্ভুক্ত।
দীর্ঘস্থায়ী কোভিড কারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন?
গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে লং কোভিডের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। যেমন—
সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী: গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষের মধ্যে লং কোভিডের হার বেশি, যা স্বাস্থ্যসেবার অসম প্রবেশাধিকারকেও ইঙ্গিত করে।
নারী: নারীদের মধ্যে লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার হার পুরুষদের তুলনায় বেশি দেখা গেছে।
দীর্ঘস্থায়ী অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা: যাদের পূর্ব থেকে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, তাদের লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
পরিচর্যাকারী ও অভিভাবকরা: যেসব ব্যক্তি পরিবার বা অন্যদের দেখাশোনা করেন, তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
জাতিগত সংখ্যালঘুরা: নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর (বিশেষ করে এশীয় ও কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের) মানুষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের হার কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের সঙ্গে সামাজিক বৈষম্যের সম্পর্ক
গবেষণার সহলেখক অধ্যাপক নাসরিন আলওয়ান বলেন, "এই গবেষণা স্পষ্টভাবে দেখায় যে লং কোভিড শুধু একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, এটি বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্যেরও প্রতিফলন। সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের মানুষরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কারণ তাদের স্বাস্থ্যসেবার প্রবেশাধিকার কম এবং তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সহায়তা সহজে পান না।"
এছাড়া, গবেষকরা বলেন, অনেক মানুষ হয়তো জানেনই না যে তারা লং কোভিডে আক্রান্ত। ফলে তারা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না এবং দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
দীর্ঘস্থায়ী কোভিড নিয়ে অনিশ্চয়তা ও চিকিৎসা গ্রহণে দ্বিধা
গবেষণায় উঠে এসেছে যে অনেক মানুষ লং কোভিডে আক্রান্ত হলেও তারা নিশ্চিত নন, কারণ—
পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব: অনেকেই জানেন না যে তাদের উপসর্গগুলো লং কোভিডের কারণে হচ্ছে।
পুরুষদের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণের অনাগ্রহ: গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা তুলনামূলকভাবে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন বেশি, কিন্তু পুরুষরা এ বিষয়ে কম আগ্রহী।
যুবকদের মধ্যে বেশি অনিশ্চয়তা: ২৫ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে লং কোভিড নিয়ে অনিশ্চয়তা বেশি দেখা গেছে।
গবেষকদের সুপারিশ ও ভবিষ্যৎ করণীয়
গবেষণার প্রধান গবেষক মিরেম্বে উডরো বলেন, "আমরা সত্যিই বিস্মিত হয়েছি যে এত মানুষ নিশ্চিত নন তারা দীর্ঘস্থায়ী কোভিডে আক্রান্ত কি না। এটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা, কারণ এটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার একটি বড় ফাঁকিকে নির্দেশ করে।"
গবেষকরা মনে করেন, লং কোভিড নিয়ে আরও গবেষণা, সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরি, যাতে আক্রান্তরা যথাযথ চিকিৎসা পেতে পারেন এবং এটি ভবিষ্যতে বড় স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত না হয়।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?