সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ দেশের ২২ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেটের সত্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। যাচাই-বাছাইয়ে ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হলে তাদের সনদ ও সরকারি গেজেট বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গত ১৩ এপ্রিল জামুকার ৯৫তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব বিশিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত আবেদন, তদন্ত প্রতিবেদন, সভার কার্যবিবরণী ও অন্যান্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করে পুনরায় যাচাই করা হবে। জামুকার চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
তদন্তের আওতায় আসা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন তিন মেয়াদের সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান ও টিপু মুনশি এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেন। এ ছাড়াও রয়েছে দুই সংসদ সদস্য, এক বিচারপতি, সাবেক সচিব, সাবেক আইজিপি ও চার সেনা কর্মকর্তা।
তদন্তের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর চার সাবেক কর্মকর্তার মুক্তিযুদ্ধকালীন তথ্য সেনা সদর দপ্তর থেকে চাওয়া হচ্ছে। যাচাই শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে অভিযোগ করার জন্য নির্ধারিত ফরম প্রকাশ করা হয়েছে এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও সরাসরি আবেদনও আমলে নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত কোনো প্রামাণ্য তথ্য নেই। এমনকি ভারতের প্রশিক্ষিত ৫১ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকাতেও তার নাম নেই। অভিযোগ রয়েছে, ১৯৮৬ সালের ‘লাল মুক্তিবার্তা’য় তার নাম জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তালিকায় থাকা অন্যদের মধ্যে শ ম রেজাউল করিমের বয়স মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় ছিল ১০ বছরেরও কম। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে বয়স হতে হয় সাড়ে ১২ বছরের বেশি। সাবেক সেনা কর্মকর্তা ফারুক খানের ক্ষেত্রেও রয়েছে গুরুতর বিতর্ক; ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আত্মসমর্পণ করে ভারতে যান।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে সুবিধা নেওয়া ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচিত হবে। তবে একই সঙ্গে সরকারের নিরপেক্ষতা ও সাহসিকতার বড় একটি পরীক্ষা এটি।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?