প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির আশায় রাশিয়া গিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কুরমুশী গ্রামের নাজির উদ্দিন। সরল বিশ্বাসে ১২ লাখ টাকা ঋণ করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ফয়েজ উদ্দিন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, নাজিরকে পাঠানো হয়েছে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে। দীর্ঘ দিন ধরে তার কোনো খোঁজ না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে নাজিরের পরিবার। গত ১৬ এপ্রিল থেকে তার আর কোনো খোঁজ নেই। স্ত্রী, সন্তান আর বাবা-মায়ের কেবলই অপেক্ষা—নাজির ফিরবে কিনা, জানেন না কেউ।
নাজিরের বাবা বলেন, “আমার ছেলে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির আশা নিয়ে রাশিয়া গেছে। ১২ লাখ টাকা সুদে এনে পাঠিয়েছি। তাকে যুদ্ধে পাঠানো হলো কেন? যারা মিথ্যা চাকরির কথা বলে তাকে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধে ঠেলে দিয়েছে, তাদের বিচার চাই। আমার ছেলেকে ফেরত চাই।”
২০১৭ সালে ইরাকে ছিলেন নাজির। সেখান থেকে ফিরে ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর ফের বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঢাকার মিরপুরের একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মামুন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। প্যাকেজিং কোম্পানির চাকরির আশ্বাসে নাজিরকে পাঠানো হয় রাশিয়ায়—১২ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে।
রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর তাকে একটি ক্যাম্পে রাখা হয়। এরপর দেওয়া হয় ১৪ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ। তারপরই পাঠানো হয় ইউক্রেনের সীমান্তে, সম্মুখ যুদ্ধে। ১৬ এপ্রিল সকালে শেষবারের মতো কান্নাভেজা কণ্ঠে ফোন করে বাবা-মাকে জানান—তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে। এরপর থেকেই নিখোঁজ।
স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, “আমার স্বামী রোজ ফোন করে কাঁদতেন, বলতেন তিনি যুদ্ধ চান না। এখন ১৬ এপ্রিলের পর থেকে কোনো খোঁজ নেই। তিনি বেঁচে আছেন না মরে গেছেন, তাও জানি না।” তিন বছর বয়সী কন্যাশিশুটি প্রতিদিন মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে বাবার খবরে আশায়।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ বলেন, “নাজির অনেক ভালো ছেলে ছিল। তাকে দালালচক্র যেভাবে প্রতারণা করেছে তা নির্মম। আমরা তাকে ফেরত চাই।” আরেকজন, আব্বাস আলী বলেন, “যেকোনো উপায়ে হোক, নাজিরকে আমরা ফেরত চাই।”
অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী মামুনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম বলেন, “ভুক্তভোগীর বাবা থানায় এসেছিলেন। তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার। থানার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।”
পরিবার এখন সরকারের দিকে চেয়ে আছে। বিদেশে চাকরির স্বপ্নে ঘর ছাড়লেও যুদ্ধের বাস্তবতা যেন সেই স্বপ্নকে ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?