ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ২২ মার্চ ভারতের সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শক কমিটিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে থেকেই ভারত জানত সেখানে জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছিল। তবে, জয়শঙ্করের মতে, ভারত তখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি, কারণ শেখ হাসিনার ওপর ভারতের যথেষ্ট প্রভাব ছিল না। তিনি বলেন, ভারত তখন শুধু 'পরামর্শ' দিতে পারত, কিন্তু কিছু করার সুযোগ ছিল না।
ভারতের সতর্কবার্তা ও চীন সম্পর্ক
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, ভারতসহ অন্যান্য প্রধান দেশগুলি বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত ছিল। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভল্কার তুর্কের মন্তব্য তুলে ধরে তিনি জানান, শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী চীনের ভূমিকা নিয়েও মন্তব্য করেছেন, তিনি চীনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, "চীন শত্রু নয়, বরং প্রতিদ্বন্দ্বী।" তার এই মন্তব্যে চীনের প্রতি ভারতীয় অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেখানে চীনের প্রভাব দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র নীতি ও প্রতিবেশী দেশগুলো: পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শক কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, পাকিস্তান এবং নেপালের পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র নীতি এবং এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও সংসদ সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা জানতে চান, আগামী এক দশকে চীনের প্রভাব মোকাবেলায় ভারত কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
ভারতের অবস্থান ও ভবিষ্যত সম্পর্ক
ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের অবস্থা এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে সংঘাত তীব্র হয়েছে, যার প্রভাব ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পড়ছে।
এছাড়া, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর ভবিষ্যত নিয়েও আলোচনার সময় জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, সার্ক এখনও পুরোপুরি বাতিল হয়নি, তবে এটি আপাতত স্থগিত রয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি সার্ক পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা উন্মুক্ত রাখেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের এই মন্তব্যগুলো, বিশেষ করে চীনের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাংলাদেশে ভারতের অবস্থান নিয়ে আলোচনা, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এবং ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়ে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?