clock ,

সূচনা ফাউন্ডেশনে ২৬৩ কোটি টাকা লেনদেন

সূচনা ফাউন্ডেশনে ২৬৩ কোটি টাকা লেনদেন

সূচনা ফাউন্ডেশনের তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ২৬৩ কোটি ৫৮ লাখ ২২ হাজার ১০৮ টাকা লেনদেন হয়েছে। ছাড়া চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে। সূচনা ফাউন্ডেশনের একটি অডিট রিপোর্ট দুদকের হাতে এসেছে। সেই অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী সূচনা ফাউন্ডেশনের তিনটি ব্যাংকে মোট সাতটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্যাংকে তিনটি সঞ্চয়ী হিসাবে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ১৩৩ কোটি ৯৮ লাখ ৯৪ হাজার ৮০৩ টাকা জমা এবং ১২৯ কোটি ৫৯ লাখ ২৭ হাজার ৩০৫ উত্তোলনসহ ২৬৩ কোটি ৫৮ লাখ ২১ হাজার ৫০৮ টাকা লেনদেন হয়েছে। ছাড়া তিনটি ব্যাংকের চারটি অ্যাকাউন্টে ৫৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে। এর বাইরে কয়েকটি ব্যাংক থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতার অর্থ সূচনা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে গেছে, যা অনুসন্ধান পর্যায়ে খতিয়ে দেখা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আর এসব তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

দুদক কর্মকর্তারা বলেন, সূচনা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোর করে উপঢৌকন নেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে ফাউন্ডেশনের নামে পাওয়া অর্থ করমুক্ত করিয়ে নেওয়া হয়, এতে সরকারের বিপুল অর্থের ক্ষতিসাধন হয়। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি নথিপত্রে উল্লিখিত রাজধানীর ধানমন্ডিতে সূচনা ফাউন্ডেশনের অফিসের ঠিকানায় অভিযানে যায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। কিন্তু সেখানে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অভিযান শেষে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সূচনা ফাউন্ডেশনের কর মওকুফসহ বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের নথি সংগ্রহ করতে দুদক এনবিআর যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। নথিপত্র অনুযায়ী সূচনা ফাউন্ডেশনের অফিশিয়াল ঠিকানা ধানমন্ডি নম্বর রোডের ৫৪ নম্বর বাড়ি অর্থাৎ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুধা সদনের বাসার ঠিকানায় সূচনা ফাউন্ডেশন নিবন্ধিত। গত আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ওই বাড়ি তালাবন্ধ রয়েছে এবং অভিযানকালে বাড়িটিতে সূচনা ফাউন্ডেশনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরে বেশ কয়েকটি স্থানে অফিসের কথা বলা হলে সেসব জায়গায়ও অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোনো হদিস মেলেনি।

জানা গেছে, দুদক টিম বিভিন্ন দপ্তর থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের কিছু রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে দুদকে পাঠানো রেকর্ডপত্রের তথ্য অনুযায়ী, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সূচনা ফাউন্ডেশনের প্রধান হলেও তিনি বেশিরভাগ সময় বিদেশে অবস্থান করতেন। তার অনুপস্থিতি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মূল দায়িত্ব পালন করতেন ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। সূচনা ফাউন্ডেশনের বিষয়ে অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের বক্তব্য জানা যায়নি।

২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ফাউন্ডেশন ফর নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅ্যাবিলিটিস অ্যান্ড মেন্টাল হেলথের নাম সংশোধন করে সূচনা ফাউন্ডেশন নামে নিবন্ধন (যার নম্বর--০৯১২২) নেওয়া হয়। অফিসের ঠিকানা দেখানো হয় ধানমন্ডির নম্বর (পুরাতন) রোডের ৫৪ নম্বর বাড়ি। সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। সূচনা ফাউন্ডেশন পরিচালনার জন্য ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদি সাত সদস্যের একটি কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। যাতে চেয়ারম্যান হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ভাইস চেয়ারম্যান কুমিল্লা- আসনের সাবেক এমপি প্রাণ গোপাল দত্ত, সাধারণ সম্পাদক ডা. মাজহারুল মান্নান, কোষাধ্যক্ষ সাইফুল্লাহ আব্দুল্লাহ এবং নির্বাহী সদস্য নাজমুল হাসান, শিরীন জামান মুনির সামসুজ্জামান।

দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম এনবিআর থেকে -সংক্রান্ত এসআরও (যার নম্বর-৮৭-আইন/২০১৬) সংগ্রহ করে। সেই এসআরও অনুযায়ী, কোনো করদাতার সম্পূর্ণ আয়ের মধ্য থেকে যে পরিমাণ আয় তিনি প্রতিবন্ধীদের কল্যাণার্থে সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে দান করবেন সেই পরিমাণ আয়কে শর্তসাপেক্ষে আয়কর প্রদান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ছাড়া অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের একটি এসআরও (নম্বর-২২৪-আইন/আয়কর/২০১৮) অনুযায়ী সূচনা ফাউন্ডেশনের স্থায়ী আমানত সঞ্চয়ী ব্যাংক আমানতের ওপর প্রাপ্ত সুদ, কনসালট্যান্সি ফি গবেষণা ফি বাবদ প্রাপ্ত আয়সহ সব ধরনের আয়ের ওপর পাঁচ বছরের জন্য আয়কর প্রদান অব্যাহতি ঘোষণা করা হয়। ওই অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৩ সালের ১১ জুলাই শেষ হওয়ায় সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল আরও পাঁচ বছরের জন্য অব্যাহতির আদেশ জারি করেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে স্বেচ্ছাসেবী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে সূচনা ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটি মানসিক প্রতিবন্ধিতা, স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে। সায়মা ওয়াজেদ এটির প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়ার পর নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়।

দুদকের কাছে থাকা অভিযোগে বলা হয়েছে, পুতুল সূচনা ফাউন্ডেশন নামে প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকন নেওয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন। ছাড়া তিনি এনবিআরের ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে ফাউন্ডেশনের নামে পাওয়া অর্থ করমুক্ত করিয়ে নেন, যাতে সরকারের বিপুল অর্থের ক্ষতি হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে নিজে লাভবান হয়েছেন। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে লেখাপড়া করা পুতুল যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তার মা শেখ হাসিনা তাকে অটিজম নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারবিষয়ক বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব দেন। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলেও তাকে সদস্য করা হয়।


MHIN এশিয়া হাব এ বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

সম্প্রতি সায়মা ওয়াজেদ সিঙ্গাপুরে সিংহেলথ ডিউক-এনইউএস গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউট, মেন্টাল হেলথ ইনোভেশন নেটওয়ার্ক (এমএইচআইএন) এর সহযোগিতায় তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে MHIN এশিয়া হাব এ WHO এর South-East Asia Region এর Regional Director হিসেবে কর্মরত থাকার কারণে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি।  স্পিচ শেষে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি তার সিঙ্গাপুর ত্যাগ করার কথা থাকলেও তিনি দুদিন আগেই সিঙ্গাপুর ত্যাগ করেন। তবে কি কারণে তিনি নির্ধfরিত সময়ের আগে সিঙ্গাপুর ছেড়ে যান সে কারণটি জানা যায়নি। 

উল্লেখ,২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের নয়া দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দায়িত্ব নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দপ্তর ভারতের দিল্লিতে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি সেখানেই আছেন। ।


You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য