রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, শিশু ধর্ষণের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রেখে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, "নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিচার ও তদন্তের সময়সীমা কমিয়ে আনা হচ্ছে। শুধু শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রাখা হচ্ছে।"
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, "ধর্ষণের মামলার জট লেগে থাকে, কারণ এখানে দুই ধরনের মামলা আসে—একটি হলো সম্মতিসহ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, আরেকটি হলো সম্মতি ছাড়া ধর্ষণ। প্রলোভনের মাধ্যমে ধর্ষণের মামলার আধিক্যের কারণে সম্মতি ছাড়া সংঘটিত ধর্ষণের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য নতুন বিধানে প্রতারণামূলক ধর্ষণকে আলাদা অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সম্মতি ব্যতিরেকে সংঘটিত ধর্ষণের বিচার ও তদন্তের সময়সীমা কমানো হচ্ছে।"
আসিফ নজরুল আরও জানান, "বিশেষ করে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ক্ষেত্রে, ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না করে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনায় বিচারক রায় দেওয়ার সুযোগ পাবেন। নতুন আইনে, ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কাউকে আক্রমণ করে ব্যর্থ হওয়ার পর যদি ভুক্তভোগী শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে সেটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।"
সম্প্রতি মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, "সংশোধিত আইনটি নতুন হলেও মাগুরার ঘটনায় তাৎক্ষণিক বিচার শুরু হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করা হবে, কারণ মামলায় প্রচুর অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।"
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, "দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ঘটনা বিবেচনায় রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় জমা দিয়েছে। উপদেষ্টামণ্ডলী বৃহস্পতিবার এ সংশোধনী অনুমোদন দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।"
ধর্ষণের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে দেশে ডিএনএ পরীক্ষার ল্যাব সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে মাত্র একটি ডিএনএ ল্যাব রয়েছে, যা ঢাকায় অবস্থিত। তবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুটি ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করা হবে।
এছাড়া ধর্ষণসহ অন্যান্য মামলার বিচার দ্রুত করতে বিশেষ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?