clock ,

শিল্পপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই

শিল্পপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই

বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি, এপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই। বুধবার (বাংলাদেশ সময়) সকাল সাড়ে ৭টায় সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুর সময় তার পাশে ছিলেন ছেলে এপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে আজ রাতের মধ্যেই মরদেহ দেশে পৌঁছাবে। এরপর বৃহস্পতিবার জানাজা দাফনের সময়সূচি চূড়ান্ত করা হবে।

শিল্প ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর জন্ম ১৯৪২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায়। তার বাবা স্যার সৈয়দ নাসিম আলী কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সম্পন্ন করার পর পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন শুরু করেন পাকিস্তান টোব্যাকো কোম্পানিতে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে। ১৯৭৫ সালে ঢাকার হাজারিবাগের ওরিয়ন ট্যানারি নিলামে কিনেএপেক্স ট্যানারিপ্রতিষ্ঠা করেন। পরে এপেক্স গ্রুপ গড়ে তোলেন, যা দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

এপেক্স গ্রুপের অধীনে বর্তমানে ১১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যএপেক্স ট্যানারি, এপেক্স ফুটওয়্যার, এপেক্স ফার্মা, ব্লু ওশান ফুটওয়্যার, এপেক্স এন্টারপ্রাইজেস, এপেক্স ইনভেস্টমেন্ট, গ্রে অ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশ, কোয়ান্টাম কনজ্যুমার সলিউশনস, সানবিমস স্কুল লিমিটেড এবং মেগা ওশান ফুটওয়্যার।

তিনি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) অন্যতম বিনিয়োগকারী এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি যোগাযোগ, নৌপরিবহন, বেসামরিক বিমান চলাচল পর্যটন, ডাক টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ণ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০০১ সালে কৃষি, নৌপরিবহন, মৎস্য পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিভিন্ন সংগঠনে নেতৃত্ব

তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেন।

এছাড়া, তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশে বেলজিয়াম দূতাবাসের অনারারি কনসাল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

সামাজিক শিক্ষামূলক কার্যক্রম

শিল্প ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সামাজিক শিক্ষামূলক কার্যক্রমেও যুক্ত ছিলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবেও কাজ করেছেন।

দেশের শিল্প, ব্যাংকিং ব্যবসা খাতে অসামান্য অবদান রাখা এই গুণী ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে ব্যবসায়ী মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

 

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য