clock ,

লিফট মেরামতের সময় স্টিলের বিমের আঘাতে বাংলাদেশি কর্মীর মৃত্যু

লিফট মেরামতের সময় স্টিলের বিমের আঘাতে বাংলাদেশি কর্মীর মৃত্যু

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, তুয়াস সাউথের একটি গুদামে কার্গো লিফট মেরামতের সময় স্টিলের বিমের আঘাতে এক বাংলাদেশি কর্মী তানভির হাসান খান (৪৪) এর মৃত্যু হয়েছে। অফশোর এবং মেরিন কোম্পানি সিট্রিয়াম মালিকানাধীন গুদামে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত কর্মীকে শনাক্ত করেন তার চাচাতো ভাই।

সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় (MOM) জানিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল .৫০ মিনিটে। কার্গো লিফটের দরজার গাইড রেল খুলতে গিয়ে একটি সংযুক্ত স্টিলের বিম স্থানচ্যুত হয়ে তার মাথায় আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান। সিঙ্গাপুর সিভিল ডিফেন্স ফোর্স (SCDF) জানিয়েছে, তারা বিকেল .৫৫ মিনিটে ৮০ তুয়াস সাউথ বুলেভার্ড থেকে সহায়তার জন্য একটি কল পান, যা সিট্রিয়ামের তুয়াস বুলেভার্ড ইয়ার্ডের ঠিকানা। সিঙ্গাপুর পুলিশ জানিয়েছে তারা .৫০ মিনিটে দুর্ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তানভির হাসান খানকে নিস্তেজ অবস্থায় পায়।

দ্য স্ট্রেইটস টাইমস এর কাছে তানভীরের মৃত্যু সনদের একটি কপি এসেছে, যেখানে মৃত্যুর কারণ হিসেবে মাথার খুলি মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত (cranio-cerebral injuries) উল্লেখ করা হয়েছে। MOM আরও জানিয়েছে যে, তানভির হাসান খান সিঙ্গাপুরের Gylet Project (S) প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন। সিট্রিয়াম গুদামে লিফট মেরামতের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটির নাম Gylet Lift (M&S)

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড কর্পোরেট রেগুলেটরি অথরিটি (ACRA)—এর নথি অনুযায়ী Gylet Project (S), Gylet Elevator এবং Gylet Lift (M&S)- এই তিনটি প্রতিষ্ঠান একই ঠিকানায় নিবন্ধিত এবং একই ব্যক্তি তাদের পরিচালক হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছেন। সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং Gylet Lift (M&S) কে সমস্ত লিফট রক্ষণাবেক্ষণের কাজ স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। MOM আরও বলেছে, সাধারণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে, নিয়োগকর্তা ঠিকাদারদের অবশ্যই কাঠামোর স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন করতে হবে এবং কোনো অংশ যদি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তা খুলে ফেলার আগে যথাযথভাবে সমর্থন বা স্থিতিশীল করতে হবে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি

তানভির হাসান খান ২০০৭ সাল থেকে একই কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। দেশে তার ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে এবং চার মাস বয়সী একটি ছেলে রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিঙ্গাপুরে কর্মরত তার চাচাতো ভাই। তিনি আরও জানান, মরদেহ সিঙ্গাপুরের একটি মসজিদে জানাজা শেষে মার্চ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার একটি গ্রামে।

সিট্রিয়াম নিহত কর্মীর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেছে, তারা মৃতের পরিবারকে সহযোগিতা করছেন। কোম্পানি কতৃর্পক্ষ বলেছেন, আমাদের সাইটে কর্মীদের নিরাপত্তা সুস্থতা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। আমরা এই ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করছি। তবে, পরিবারের প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং চলমান তদন্তের কারণে আমরা এখনই আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে পারছি না।

সিঙ্গাপুরে চলতি বছর কর্মক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় এটি তৃতীয় মৃত্যু। গত জানুয়ারি ভারতের আরিদোসালু অরুলরাজ (২৯) নামে এক নির্মাণ শ্রমিক তেঙ্গাহ এলাকায় একটি হাউজিং বোর্ড প্রকল্পের সাইটে কাজ করার সময়ে কংক্রিট পাম্প ট্রাকের পাইপের আঘাতে মারা যান। এছাড়া ২৫ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরের র্যাফেলস প্লেসের একটি নির্মাণস্থলে কাজ করার সময় মাটি ধসে একজন বাংলাদেশি শ্রমিক (৩১) মারা যান। ওই জায়গায় আগে ক্লিফোর্ড সেন্টার ছিল।

২০২৪ সালের প্রথমার্ধে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ১৯ জন শ্রমিক মারা যান, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় বেশি (সেই সময় মৃতের সংখ্যা ছিল ১৪) ২০২৪ সালের পুরো বছরের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয়। তবে ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে নির্মাণ খাতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা প্রথমার্ধের ( জন) তুলনায় তিনগুণ বেশি। দ্য স্ট্রেইটস টাইমস

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য