লরির পেছনে শ্রমিক পরিবহন নিষিদ্ধ করা বাস্তবসম্মত নয়, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে: অ্যামি খোর
লরির পেছনে শ্রমিক পরিবহন নিষিদ্ধ করা বাস্তবসম্মত নয়, কারণ এটি অনেক ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (SME) টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে, বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের পরিবহন, টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ বিষয়ক সিনিয়র মন্ত্রী অ্যামি খোর। তিনি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সংসদে এই মন্তব্য করেন। ড. খোর বলেন, অনেক মাইক্রো, ছোট এবং মাঝারি আকারের উদ্যোক্তাদের জন্য, এটি প্র্যাকটিক্যাল বা বাস্তবসম্মত নয় যে, নিয়োগকর্তারা আলাদাভাবে শ্রমিকদের, তাদের যন্ত্রপাতি এবং পণ্যগুলি পরিবহন করার জন্য বিভিন্ন যানবাহন এবং ড্রাইভার রাখবেন। এই নিষেধাজ্ঞা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ (যেমন HDB, আবাসন, স্কুল, হাসপাতাল, MRT লাইন ইত্যাদি) শেষ হতে বিলম্ব ঘটাবে এবং সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের জন্য ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। সংসদে নি সুন GRC এর সংসদ সদস্য লুইস অঙ প্রশ্ন রেখেছিলেন যে লরির পেছনে শ্রমিকদের বসা, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কিম্বা লরি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে পরিবহন মন্ত্রণালয় কি নির্দেশনা পেয়েছে এবং মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে মোকাবেলা করতে কি পদক্ষেপ নিচ্ছে? তার প্রশ্নের জবাবে ড. খোর জানান, সরকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
মি. অঙ দীর্ঘ সময় ধরে চলা একটি বিতর্কে শ্রমিকদের লরির পেছনে পরিবহনের নিরাপত্তার পক্ষে দৃঢ় সমর্থক ছিলেন, যা ২০০০ সালের দশক থেকে শুরু হয়।
ডক্টর খোর আরও উল্লেখ করেছেন যে লরি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা “প্রযোজ্য নয়” কারণ গণ পরিবহন, স্কুল বাস এবং ট্যুর বাস খাতগুলিতে বাস চালকের সংকট প্রকট। তবে, সরকার লরির বিকল্প হিসেবে বাস এর ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে।
ডক্টর খোর ওহ হুপ নামক এক কনস্ট্রাকশন কোম্পানির উদাহরণ তুলে ধরেন, যারা বেশিরভাগ শ্রমিককে লরি না ব্যবহার করে বাসে পরিবহন করছে। তিনি বলেন, শিল্প সংগঠন এবং নিয়োগকর্তারা বলেছেন যেখানে সম্ভব সেখানে তারা শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।
ডক্টর খোর বলেন, সরকার শ্রমিকদের পরিবহন প্রয়োজন কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে, উদাহরণস্বরূপ নির্মাণ সাইটগুলির কাছে শ্রমিকদের জন্য ডরমিটরি তৈরি করা। এটি জাহাজ নির্মাণ কারখানা এবং বড় নির্মাণ সাইটগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আরেকটি লক্ষ্য হলো যখন নিয়োগকর্তারা তাদের শ্রমিকদের পরিবহন করতে লরি ব্যবহার করতে বাধ্য হন, তখন কিছু ব্যবস্থা যেমন লরিতে স্পিড লিমিটার ইনস্টল করা, ড্রাইভিং দায়িত্বে থাকা শ্রমিকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা, এবং বৃষ্টি থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করতে বৃষ্টি আবরণ বাধ্যতামূলক করার কথাও উল্লেখ করেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক ফেসবুক পোস্টে ডক্টর খোর বলেন, নিয়োগকর্তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে যে তারা শ্রমিকদের নিরাপদে পরিবহন নিশ্চিত করবেন। মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়, ট্রাফিক পুলিশ এর সহায়তায়, কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যদি তারা এই দায়িত্ব এড়িয়ে চলে, যেমন চালকদের যথেষ্ট বিশ্রাম নিশ্চিত না করা বা অযৌক্তিক সময়সূচী পূরণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা। ডক্টর খোর উল্লেখ করেছেন যে, লরির পেছনে পরিবহনকালে আহত শ্রমিকদের বার্ষিক গড় সংখ্যা ২৫ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গড়ে ২১৫ জন থেকে ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১৬১ জনে। গত দশ বছরে গড়ে একটি প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর তুয়াসে লরি দুর্ঘটনায় তিনজন মারা যান যার মধ্যে ৪০ বছর বয়সী বাংলাদেশি ওয়েল্ডার কর্মী সোহাগ মোহাম্মদ ছিলেন একজন। লরির পেছনে, শ্রমিকদের সঙ্গে একটি ভারী টুলবক্স বহন করা হচ্ছিল যা তার উপর পড়ে, ঘটনাস্থলেই গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি মারা যান। পরিবহন মন্ত্রী চী হং ট্যাট গত ৭ জানুয়ারি বলেন, লরির চালককে অবহেলাজনিতভাবে মৃত্যুর কারণ হওয়ার জন্য তদন্ত করা হচ্ছে, যার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?