রমজানের শেষ দশক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময়টিতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিতভাবে রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে ইতিকাফ করতেন এবং তার অনুসারীরাও এই আমলে অংশগ্রহণ করতেন। ইতিকাফের মাধ্যমে মুমিনরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ পান। ইসলামের দৃষ্টিতে ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা বিভিন্ন বিধান ও শর্তাবলী অনুসারে পালন করা হয়।
ইতিকাফের প্রকারভেদ
ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অবস্থান করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদে এক বিশেষ সময়ে বিশেষ নিয়মে নিজেকে আবদ্ধ রাখাকে ইতিকাফ বলা হয়। ইতিকাফ তিন প্রকার—
১. সুন্নত ইতিকাফ:
রমজানের শেষ দশ দিনে
মসজিদে অবস্থান করা সুন্নত ইতিকাফ।
এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া অর্থাৎ কোনো এক ব্যক্তি
যদি এটি আদায় করে
তবে মহল্লার অন্যদের পক্ষ থেকে দায়িত্ব
আদায় হয়ে যাবে। তবে
কেউ না করলে পুরো
সমাজ গুনাহগার হবে।
পুরুষদের জন্য মসজিদে অবস্থান করা বাধ্যতামূলক, তবে নারীরা তাদের ঘরের নির্ধারিত নামাজের স্থানে ইতিকাফ করতে পারবেন।
রমজানের ২০ তারিখ আসরের নামাজের পর মসজিদে প্রবেশ করতে হবে এবং ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে।
ইতিকাফ অবস্থায় বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া যাবে না, তবে প্রয়োজনীয় কাজ যেমন—প্রাকৃতিক কাজ, ফরজ গোসল ও জুমার নামাজের জন্য বাইরে যাওয়া জায়েজ।
২. মান্নতের ইতিকাফ:
কেউ যদি মান্নত করেন
যে, ‘আমার এই কাজ
হয়ে গেলে আমি ইতিকাফ
করব’, তাহলে তা পালন করা
ওয়াজিব হয়ে যায়। এ
ধরনের ইতিকাফ রোজাসহ পালন করতে হয়।
৩. নফল ইতিকাফ:
নফল ইতিকাফ যেকোনো সময়, অল্প সময়ের
জন্যও করা যায়। এটি
করার জন্য রোজা রাখা
বাধ্যতামূলক নয়।
ইতিকাফ পালনকারীর জন্য করণীয়
আল্লাহর জিকির, কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে সময় কাটানো।
পার্থিব আলোচনা, অযথা কথা বা সময় নষ্ট করা থেকে বিরত থাকা।
পরিবারের সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে মোবাইলে যোগাযোগ করা জায়েজ, তবে অহেতুক আলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে।
মসজিদের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া।
নারীদের ইতিকাফ
নারীরা ঘরে নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন।
যদি নির্ধারিত স্থান না থাকে, তবে ইতিকাফের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে নিতে হবে।
ইতিকাফ চলাকালীন নারীদের পিরিয়ড শুরু হলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। পরে একদিন রোজাসহ ইতিকাফ কাজা করতে হবে।
ইতিকাফ অবস্থায় করণীয় ও বর্জনীয়
করণীয়:
✔ আল্লাহর
ইবাদতে মনোযোগী হওয়া
✔ কোরআন
তেলাওয়াত, দোয়া-দরুদ ও
ইস্তিগফার করা
✔ ফরজ
নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা
বর্জনীয়:
✖ অহেতুক
কথা বলা ও পার্থিব
আলোচনা করা
✖ বিনা
প্রয়োজনে মসজিদের বাইরে যাওয়া
✖ মোবাইল
ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় নষ্ট করা
ইতিকাফ মূলত আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। এটি শুধু আত্মশুদ্ধির মাধ্যম নয়, বরং রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা লাইলাতুল কদরের ফজিলত লাভের সুযোগ এনে দেয়। মুসলিম উম্মাহর উচিত ইতিকাফের নিয়ম মেনে যথাযথভাবে এটি পালন করা, যাতে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যায়।
ইসলামিক সূত্র ও ফিকহ গ্রন্থসমূহ
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?