clock ,

যৌক্তিক-অযৌক্তিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ জাতির ভবিষ্যত

যৌক্তিক-অযৌক্তিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ জাতির ভবিষ্যত

সমগ্র দেশ জাতি আজ এক ক্রান্তিকালে উপনীত। সংকটপূর্ণ মুহূর্তে দেশ পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব তার অধিবাসীদের স্বধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকার সম্ভাব্যতা। একথা অনস্বীকার্য, স্বৈরাচার হাসিনা তার দুর্বৃত্তকারী দোসরদের চূড়ান্ত উৎখাতের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা দেশের সকল স্তরের, সকল শ্রেণির মানুষের গণঅভ্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলেও এই যুগান্তকারী সফলতা ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছিল তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের বুদ্ধিমত্তা, দুরদর্শীতা, অদমনীয় সাহস সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে। জুলুমবাজ হাসিনার নৃশংসতামুক্ত নতুন বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটেছে তাঁদেরই নেতৃত্বে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যুগোপযোগী সংস্কার সাধনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে এনে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশে ন্যায়বিচার মেধাভিত্তিক সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার আপস না করে সকল দেশের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করা।

একই কারণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর  বিশ্বাস, দেশ সমগ্র জাতির কল্যাণে ঘোষিত অত্যাবশ্যকীয় সকল সংস্কার নিরপেক্ষ সুচারুরূপে সাধন কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক নয়, একমাত্র বর্তমান নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্বারাই সম্ভব। এছাড়া, দীর্ঘ দেড় দশক যাবত নির্বিচারে শত সহস্র নিরাপরাধ মানুষদের হত্যা গুম করা এবং দরিদ্র দেশের খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ লুণ্ঠন বিদেশে পাচার করার অপরাধে অভিযুক্ত রক্তপিপাসু স্বৈরাচার হাসিনা তার দোসরদের দ্রুত বিচার সকল প্রকার ব্যক্তিগত গোষ্ঠীভিত্তিক লাভ-ক্ষতির তোয়াক্কা না করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা কেবল . ইউনূসের নেতৃতাধীন বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্বারাই সম্ভব।

সাধারণ মানুষ সংস্কার বোঝে না, বোঝে শুধু দুমুঠো মোটা ভাত, মোটা কাপড় আর মাথার উপর ছাদঅতি সম্প্রতি জনাব মির্জা ফখরুলের মুখে উচ্চারিত কথাগুলো আংশিক সত্য। তবে আমাদের কারো ভুলে যাওয়া উচিত নয়, দেশের শত সহস্র মানুষ কেবল মোটা ভাত, মোটা কাপড় আর ভোটাধিকার আদায়ের জন্যই স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বৈরাচার উৎখাতসহ অগণিত আন্দোলনে অকাতরে রক্ত ঝরায়নি। ন্যায়বিচার এবং দেশ জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের ধারাবাহিকতা চিরতরে মাটি চাপা দিয়ে মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষিত করার জন্যই ছিল তাঁদের নজিরবিহীন জীবন উৎসর্গ।লেডি হিটলারহাসিনার ১৬ বছরের নৃশংস রাজত্বকালসহ স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৪ বছরে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সরকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর ন্যূনতম এই চাহিদাগুলো পুরণ করা দূরে থাক, কখনো সদিচ্ছা বা আন্তরিক প্রচেষ্টা দেখাতেও পারেনি।

মাঠে-ময়দানে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে জনগণের চাহিদার বুলি আওড়ানোর দিন ফুরিয়ে গেছে। অতীতের কথা স্মরণে রেখে মানুষ এখন সকল প্রতিশ্রুতির সম্ভাব্য বাস্তবায়নের ছবি নেতা-নেত্রীদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মাঝে দৃশ্যমান হওয়া আবশ্যক মনে করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘুণেধরা এবং দুর্নীতির আবরণে আচ্ছাদিত দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আশু সংস্কার ব্যতীত জনগণের প্রকৃত আকাঙ্খা কোনো রূপেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহিত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদেক্ষেপ একান্ত অপরিহার্য বলে দেশবাসীর নিকট স্বীকৃত গৃহীত হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।

উপরোক্ত কারণে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, তথা ছাত্র-জনতার ইচ্ছা আবেগের স্রোতধারার বিপরীতে বক্তব্য এবং কার্যক্রম পরিহার করে তাঁদের ইচ্ছা আকাঙ্খার প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করলেই বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলো লাভবান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের স্মরণ রাখা উচিত ছাত্র-ছাত্রী এবং তরুণ-তরুণীরা আমাদেরই সন্তান। তাই তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা আত্মঘাতী বৈ আর কিছু নয়। তাদের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে দেশ জাতির ভবিষ্যত নেতৃত্ব তাদের হাতে তুলে দিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করার পথ সুগম করে দেয়ার দায়িত্ব তাদের অগ্রজ অভিভাবকদের উপরই বর্তায়।

আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের বিপক্ষে নই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুবাদে তাঁর বেগম খালেদা জিয়াসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং স্বাধীনতার সূচনালগ্ন হতে অধীকাংশ প্রবীন রাজনীতিবিদকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হওয়ার কারণে, তাঁদের চিন্তা চেতনা সম্পর্কে আমার এক সম্যক ধারণা রয়েছে বলেই বিষয়ে আমার মতামত তুলে ধরার প্রয়াস। কাউকে খাটো করা বা কারো প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আমার কাম্য নয়। তবে দেশের মানুষেব অতুলনীয় বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এক অভূতপূর্ব অর্জনের পর অপার সম্ভবনাময় দেশটির আরেকটি সম্ভাব্য সংঘাতের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিস্থিতি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং বয়োজ্যেষ্ঠ প্রবীন নাগরিক হিসেবে আমাকে গভীরভাবে  উৎকণ্ঠিত ব্যথিত করে তুলছে বলেই বাস্তবতার ভিত্তিতে কিছু অপ্রিয় সত্য কথা উচ্চারিত করতে বাধ্য হলাম।

রাজনীতি জনকল্যাণের তরে উৎসর্গকৃত’, সকল ‘রাজনীতিদের মুখে অহরহ উচ্চারিত এই স্লোগানটি যদি সত্যিই তাদের অন্তরের আকাঙ্খা হৃদয়ের বাসনা হয়ে থাকে তবে সংস্কারবিহীন নয়, সংস্কারোত্তর নির্বাচনে তাদের বিরোধিতা অমূলক অনাকাঙ্খিত।

  লেখক: বীর প্রতীক


You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

সম্পর্কিত খবর

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য