"হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পাচ্ছি"—জাতীয় নারী ফুটবলার মাতসুশিমা সুমাইয়া মঙ্গলবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি পোস্ট দেওয়ার পর ক্রীড়াঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার ইস্যুতে বিদ্রোহী ১৮ নারী ফুটবলারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে জানার জন্য অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, সাফের সেরা ফুটবলার ঋতুপর্না চাকমাসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক নারী ফুটবলারের বার্তায় ফুটে উঠেছে তাদের মানসিক অবস্থা, "কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় নেই আমি। যাদের মানসিক অবস্থাই ভালো নেই, তারা আর কতটা নিরাপত্তায় থাকতে পারে? মানসিকভাবে অসুস্থ অনুভব করছি, প্রতিটি মিনিট যেন ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।"
২০২২ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে সিনিয়র ফুটবলারদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। শিরোপা জয়ের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে মনে হলেও গত সপ্তাহে কোচের ডাকা মিটিংয়ে সিনিয়র ফুটবলারদের অনুপস্থিতি স্পষ্ট করে দেয়, দ্বন্দ্ব এখনো রয়ে গেছে।
এরপর বাটলারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে তিন পৃষ্ঠার বিবৃতি সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠান নারী ফুটবলাররা। তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে বাফুফে (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন) বিশেষ কমিটি গঠন করে। গত রবিবার ও সোমবার ১৮ ফুটবলার নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
কিন্তু এই প্রতিবাদের কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে এবং অনেকে প্রকাশ্যে ব্রিটিশ কোচ বাটলারের পক্ষ নিয়ে ফুটবলারদের সমালোচনা করতে শুরু করেন।
এক নারী ফুটবলার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, "আমরা যে দেশকে সাফের শিরোপা এনে দিয়েছি, সেই দেশের মানুষদের কাছ থেকে সমর্থন না পেয়ে হতাশ। কিছু ভুয়া নিউজ ও ফেসবুক গ্রুপে আমাদের নিয়ে মনগড়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা আমাদের মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত করছে।"
এমনকি ফুটবলারদের পরিবারের ওপরও এই বিতর্কের প্রভাব পড়েছে। সেই ফুটবলার আরও বলেন, "আমাদের পরিবারের কী অবস্থা, সেটা শুধু আমরা জানি। অভিযোগ করলেই উল্টো আমাদেরই দোষ খুঁজে বের করা হয়।"
সুমাইয়ার পোস্টেও স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে তাদের মানসিক কষ্ট, "আমি জানি না, এই মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আমার কত সময় লাগবে। তবে এটুকু বলতে চাই, শুধু নিজের স্বপ্ন অনুসরণ করার জন্য যেন আর কাউকে এই পরিস্থিতির শিকার হতে না হয়।"
ইংরেজিতে চিঠি লেখা ও হুমকির অভিযোগ
বাফুফে
সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে লেখা একটি ইংরেজি
চিঠির কারণে হত্যার ও ধর্ষণের হুমকি
পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন
সুমাইয়া। বাংলায় না লিখে ইংরেজিতে
চিঠি দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে
তিনি বলেন—
"জাতীয় দলে যখন কোনো
চিঠি লেখা হয়, তখন
সেটি ইংরেজিতে লিখতে হয়। আমিও নিয়ম
মেনে ইংরেজিতে লিখেছি।"
শুধু সুমাইয়াই নন, আরও কয়েকজন নারী ফুটবলার বিভিন্নভাবে হুমকির শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের জন্য বাফুফে ক্যাম্প ছেড়ে বাসায় যাওয়া সুমাইয়াকে ভবনে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ সুমাইয়ার বাবাকে ফোন করে ক্যাম্পে ফেরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, মাহফুজা আক্তারের কাছ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বাফুফে সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার জানিয়েছেন "নারী ফুটবলাররা আমাদের জাতীয় দলের সদস্য। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। তারা যদি হুমকি পেয়ে থাকে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
কোচ-বিতর্কের জেরে ফুটবলারদের মানসিক অবস্থা গুরুতর সংকটের মধ্যে পড়েছে। এখন দেখার বিষয়, বাফুফে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?