clock ,

মানব পাচারে রিক্রুটিং এজেন্সির নতুন কৌশল

মানব পাচারে রিক্রুটিং এজেন্সির নতুন কৌশল

রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার মারজান টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে রাশিয়া গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের জন্য যাচাই-বাছাই পরীক্ষা চলছিল। গত ফেব্রুয়ারি সেখানে পরীক্ষায় অংশ নেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্মাণ শ্রমিক নিয়ামত আলী। দেশে মাসে কষ্টেসৃষ্টে ২০ হাজার টাকা আয় করলেও, রাশিয়ায় একই ধরনের কাজ করলে আয় হতে পারে এক লাখের বেশি। থাকা-খাওয়া, চিকিৎসাসহ সব সুবিধার প্রলোভনে স্থানীয় দালালের প্রস্তাব লুফে নেন তিনি।

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অধিকাংশই দিনমজুর বা স্বল্পশিক্ষিত শ্রমিক। তাদের মধ্যে অনেকে সরকারি অনুমোদনহীন রিক্রুটিং এজেন্সি আল-সৌরভ ওভারসিজ এর মাধ্যমে রাশিয়া যেতে আগ্রহী। তবে সম্প্রতি কর্মী ভিসার আড়ালে মানবপাচারের বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে।

সন্দেহজনক নিয়োগ প্রক্রিয়া

আল-সৌরভ ওভারসিজের নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান দাবি করেন, তারা রাশিয়ার স্টোরি স্ট্রাকচার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪০০ কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন। তবে তিনি কোনো অনুমোদিত নথিপত্র দেখাতে পারেননি।

রাশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মাজেদুর রহমান সরকার জানান, নিয়ম অনুযায়ী রাশিয়ার কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চাইলে দূতাবাসে চাহিদাপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু স্টোরি স্ট্রাকচার নামে কোনো প্রতিষ্ঠান দূতাবাসে কোনো চাহিদাপত্র জমা দেয়নি।

মানবপাচারের প্রমাণ

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাশিয়ায় বিভিন্ন কাজের ভিসায় শ্রমিকদের পাঠিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে বাধ্য করা হচ্ছে। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমেও ধরনের পাচার হচ্ছে। অনেকেই ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে রাশিয়ার চক্রের কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন। ইতোমধ্যে কেউ কেউ নিহত আহত হয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাকরির লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে শ্রমিক সংগ্রহ করছে এই চক্র। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে প্রকাশ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে, যেখানে বলা হয়, রাশিয়ায় কর্মী প্রয়োজনবেতন ৮০০-৯০০ ডলার, থাকা-খাওয়া ফ্রি।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা রিক্রুটিং এজেন্সি সরকারের অনুমোদন ছাড়া বিদেশে কর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারে না। এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আল-সৌরভ ওভারসিজ এবং জান্নাত ওভারসিজ এই নিয়ম উপেক্ষা করে কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করছে।

রিক্রুটিং এজেন্সির নতুন কৌশল

জান্নাত ওভারসিজও একইভাবে রাশিয়ায় কর্মী পাঠানোর চেষ্টা করছে। প্রতিষ্ঠানটি ৩০০ দক্ষ ১০০ অদক্ষ শ্রমিকের জন্য নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি নিয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়।

বিএমইটি-এর প্রশিক্ষণ পরিচালনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, “আমরা বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সিকে জব ফেয়ার করার সুযোগ দিই, তবে সব কার্যক্রম আইনানুগ হতে হবে।কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, জান্নাত ওভারসিজ আল-সৌরভ ওভারসিজ রাশিয়ায় অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক পাঠানোর চেষ্টা করছিল।

অস্তিত্বহীন কোম্পানিতে শ্রমিক নিয়োগ

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জান্নাত ওভারসিজ আল-সৌরভ ওভারসিজ রাশিয়ায় বাস্তবে অস্তিত্বহীন কোম্পানির জন্য শ্রমিক নিয়োগ করছিল। তারা বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়নি। অথচ সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ জনের বেশি কর্মী নিয়োগে দূতাবাসের সত্যায়ন সরকারি অনুমোদন বাধ্যতামূলক।

জান্নাত ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী লিমা বেগম স্বীকার করেন যে তারা ফেসবুকের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। তবে তিনি দাবি করেন, “আমরা পরীক্ষাটি বাতিল করেছি, কারণ রাশিয়া থেকে সব কাগজপত্র আসেনি।

অন্যদিকে, আল-সৌরভ ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিনের সাক্ষাৎ পেতে তার অফিসে গেলে জানানো হয়, তিনি উপস্থিত নেই। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিকুল ইসলাম সোহেলও কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

রাশিয়ায় মানবপাচারের এই নতুন কৌশল অনেক সহজ-সরল শ্রমিকের জীবন হুমকির মুখে ফেলছে। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সরকারের অনুমোদন নিশ্চিত না করে শ্রমিক পাঠানো বেআইনি এবং বিপজ্জনক। বিষয়ে যথাযথ তদন্ত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, যাতে আর কেউ প্রলোভনে পা দিয়ে যুদ্ধের বলি না হয়।

You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?

সম্পর্কিত খবর

আমাদের অনুসরণ করুন

জনপ্রিয় বিভাগ

সাম্প্রতিক মন্তব্য