যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন এক তরফাভাবে নতুন আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। চীন, ভারত ও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কার আশঙ্কায় ছিল। ঠিক তখনই হস্তক্ষেপ করেন বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তাঁর লেখা একটি ব্যক্তিগত চিঠি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন আনে। চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে কেবল বাংলাদেশ নয়, উপকৃত হয়েছে ভারতসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়া।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউজ জানায়—চীন, ভারত, বাংলাদেশসহ একাধিক দেশের পণ্যে ২৭ থেকে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে—যার মধ্যে রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, খাদ্যসংকট এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা।
এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় রুপি ও টাকার মান দ্রুত পড়ে যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা শুল্কের হুমকি দেয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়।
ইউনূসের চিঠি: কূটনৈতিক মোড় ঘোরানো এক বার্তা
এই পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস, যিনি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং UNCTAD-এর সাবেক উপদেষ্টা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি ব্যক্তিগত চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি তিনটি অনুরোধ জানান:
শুল্ক আরোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হোক
আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ রাখা হোক
উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি যেন ধ্বংস না হয়
হোয়াইট হাউজ সূত্র বলছে, এই চিঠিকে “উল্লেখযোগ্য গুরুত্বে” বিবেচনা করা হয়।
চিঠি পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, “চীন ছাড়া অন্যান্য দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত।” ভারতের ওপর শুল্ক নামিয়ে আনা হয় ১০ শতাংশে।
বাজারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
NASDAQ ও DOW JONES–এ রেকর্ড উল্লম্ফন
প্রযুক্তি খাতের সম্মিলিত বাজারমূল্য একদিনে বেড়ে যায় প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার
ভারতের সেনসেক্স ১,২০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়
ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখে
এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আসে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়—মোদি তাঁর উপদেষ্টাদের ড. ইউনূসের লেখা বই 'A World of Three Zeros' পুনরায় পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া ভারতের নীতি আয়োগ এবং 'ইউনূস সেন্টার'-এর মধ্যে সম্ভাব্য অংশীদারিত্ব গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: ‘দ্য ম্যাজিক ম্যান’
BBC, The Economist, Washington Post এবং Al Jazeera–সহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ড. ইউনূসকে আখ্যা দিয়েছে: “The Magic Man of Global Diplomacy”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও Truth Social-এ লিখেছেন: “আমি আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়াই শুধু হৃদয়ের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” বিশ্লেষকদের মতে, এই 'হৃদয়ের কথা'ই ছিল ড. ইউনূসের চিঠি।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনকে সরকারিভাবে ধন্যবাদ জানানো হলেও, ড. ইউনূসের ভূমিকা নিয়ে সরকার পক্ষ কোনো মন্তব্য না করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন কেবল একজন নোবেলজয়ী ব্যক্তি নন, তিনি হয়ে উঠেছেন এক আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সেতুবন্ধন।
যেখানে অর্থনীতি, নীতি ও ন্যায়বিচার মিলেমিশে তৈরি করছে শান্তির নতুন ভাষা। বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার এই সময়ে তাঁর মতো নেতৃত্বই হতে পারে ভবিষ্যতের নতুন দিকনির্দেশ।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?