বাংলাদেশ সরকার বিদেশি সাধারণ কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে যেসব বিদেশি নাগরিক বর্তমানে সাধারণ কর্মী হিসেবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে দেশে কাজ করছেন, তাদের অনুমতি মেয়াদ শেষে আর নবায়ন করা হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় হ্রাস পাবে এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ সম্ভব হবে।
চলতি এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশে যেসব পেশায় পর্যাপ্ত দেশি জনবল রয়েছে—যেমন কারখানার অপারেটর, টেকনিশিয়ান, মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপক বা সাধারণ প্রকল্পকর্মী—সেসব পদে বিদেশি নাগরিকদের কর্মসংস্থান অনুমোদন করা হবে না। ব্যতিক্রম কেবল বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের পেশায়।
অপরদিকে, বিদেশি কর্মীদের তথ্যভান্ডার গড়ে তুলতে একটি অনলাইনভিত্তিক সফটওয়্যার সিস্টেম চালুর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে অন-অ্যারাইভাল ভিসার জন্য অ্যাপ চালু করা হয়েছে।
এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পুলিশ স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) তিনটি টিম মাঠে নেমেছে ভিসার শর্ত লঙ্ঘনকারী বিদেশিদের শনাক্ত করতে। যারা ভিসার শর্ত ভেঙে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন বা অপরাধে জড়িয়েছেন, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত একাধিক বিদেশিকে এমন কারণে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব দেশের বাংলাদেশে দূতাবাস রয়েছে, সেই দেশের নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া বন্ধ করা হবে। ব্যতিক্রম শুধু সরকার-আয়োজিত প্রোগ্রাম, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট (বিশেষত ক্রিকেট), প্রতিরক্ষা ও জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিদেশিরা। ফুটবলসহ অন্যান্য খেলার ক্ষেত্রে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হবে না।
২০২০ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর এক গবেষণায় উঠে আসে, বাংলাদেশে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ২.৫ লাখ বিদেশি কর্মরত রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে বছরে গড়ে ৩.১৫ বিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয় এবং সরকারের বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাতে হয়।
সরকারি হিসেবে, বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার বিদেশি নাগরিক বৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এর অর্ধেকের বেশি সাধারণ কর্মে নিয়োজিত। এদের বেশিরভাগই রয়েছেন তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক এনজিও, চিকিৎসা সেবা ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান এ পদক্ষেপকে সময়োপযোগী বললেও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বিদেশিদের নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এখন দেশেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত অপারেটর, টেকনিশিয়ান ও ম্যানেজার পাওয়া যাচ্ছে, ফলে সাধারণ পদে বিদেশি নিয়োগ না দিলেও সমস্যা হবে না।
এই নতুন নীতির পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকারের কঠোর নজরদারি ও পরিকাঠামোগত প্রস্তুতির ওপরই নির্ভর করছে এর সফলতা।
You Must be Registered Or Logged in To Comment লগ ইন করুন?